—ফাইল চিত্র।
ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের দেহে করোনাভাইরাস মিলছে নানা দিক থেকে। এর আগে মহারাষ্ট্র ফেরত কয়েকজনের দেহে রোগ ধরা পড়ে বনগাঁয়। মহকুমার গোপালনগরে শুক্রবার এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হয়েছে। বসিরহাট মহকুমাতেও শুক্রবার নতুন করে ৬ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের দত্তপুকুরে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মুম্বই-ফেরত এক ব্যক্তি নেহালপুরে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তে ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। বহু জায়গায় শারীরিক দূরত্ব বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বনগাঁর বিভিন্ন স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়রান্টিন রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও জায়গায় আপত্তি তুলছেন স্থানীয় মানুষ। পথ অবরোধও হয়েছে এ নিয়ে। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘মানুষকে আরও সহনশীল হতে হবে।’’
বসিরহাটের স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, সম্প্রতি মুম্বই থেকে কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক বসিরহাটের মাটিয়া এবং বাদুড়িয়ায় ফিরেছেন। তাঁদের করোনার উপসর্গ না থাকলেও লালারস পরীক্ষায় মাটিয়া থানা এলাকার ৫ জন এবং বাদুড়িয়া থানা এলাকার ১ জনের করোনা পজেটিভ মিলেছে। আক্রান্তেরা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে কোয়রান্টিন জ়োন ঘোষণা করে দোকান-বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের আত্মীয়- পরিজনদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন, গ্রামবাসীদের সংস্পর্শে আসছেন— এই অভিযোগে বনগাঁয় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রশাসন ও স্বাস্ব্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফিরে আসা শ্রমিকদের স্কুলে নিভৃতবাসে রাখা হবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হতেই মহকুমার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দাবি তুলেছেন, তাঁদের এলাকায় স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা যাবে না।
গোপালনগরের শ্রীপল্লি এলাকার একটি স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের শুক্রবার সকালে ঢোকাতে বাধা দেন এলাকার বাসিন্দারা। মহিলারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে চারজন পরিযায়ী শ্রমিককে স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করেছে। গ্রামবাসীর দাবি, তাঁদের গ্রামের ছাড়া অন্য গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকদের তাঁরা স্কুলে থাকতে দেবেন না।
বৃহস্পতিবার গোপালনগরর হরিশপুরে গ্রামবাসীরা স্কুলের নিভৃতবাসে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা যাবে না বলে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে অন্য একটি স্কুলে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করেন।
বনগাঁ শহরের চারটি স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ ও পুরসভা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন চাঁপাবেড়িয়া এবং সিকদারপল্লি এলাকার মানুষ। সিকদারপল্লিতে সড়ক অবরোধ করা হয়। শুক্রবার শ্রমিকদের নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের বারান্দায় এবং একটি প্রাথমিক স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা আমাদের শহরেরই বাসিন্দা। তাঁদের পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য। মানুষকে বুঝিয়ে শ্রমিকদের স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করছি।’’ পুরসভার থেকে মানুষকে সচেতন করতে মাইক প্রচার বের করা হয়েছে।
গাইঘাটা ব্লকের ২৮টি স্কুলে নিভৃতবাস তৈরি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফিরে আসা শ্রমিকদের বেশিরভাগ স্কুলে রাখা সম্ভব হলেও মরালডাঙা, ফুলসরা সহ কয়েকটি এলাকায় স্কুলে রাখা যায়নি। ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে স্থানীয় মানুষের। পরে অবশ্য স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কর্তারা গ্রামবাসীকে বোঝানোর কাজ শুরু করেছেন।
ঠাকুরনগর সচেতন নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক লিটন মৈত্র বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত-প্রশাসনের উচিত, মানুষকে বুঝিয়ে এলাকা স্যানিটাইজ করে তাঁদের মন থেকে আতঙ্ক সরিয়ে তারপরে শ্রমিকদের স্কুলে ঢোকানো।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখতে দিতে আপত্তি তুলে কিছু মানুষ অমানবিক আচরণ করছেন। পুলিশকে বলেছি, আইনি পদক্ষেপ করতে।’’ হাবড়া ১ ব্লকের বেড়গুম হাইস্কুলে শ্রমিকদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লোকজন সেখানেও বাধা দেন। তাঁদের দাবি, স্কুলটি বেড়গুম ২ পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে। স্কুলে কেবলমাত্র ওই পঞ্চায়েত এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকেরাই থাকবেন। বাইরের এলাকার কেউ থাকতে পারবেন না। প্রশাসন ওই দাবি মেনে নেওয়ায় সমস্যা মেটে।
গোপালনগরের আকাইপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট শুক্রবার আমরা পেয়েছি। তিনি পজিটিভ। তাঁকে নিউটাউন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। স্যানিটাইজ করা হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি ১৯ মে মহারাষ্ট্র থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরেছিলেন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে তাঁর লালারস সংগ্রহ করা হয়। তিনি নিভৃতবাসে ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy