রায়দিঘির জটার দেউল। ছবি: দিলীপ নস্কর।
রায়দিঘির প্রাচীন স্থাপত্য জটার দেউলকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে কাজ এগোয়নি। শীতের মরসুমে প্রতি বারের মতো এ বারও প্রাচীন এই মন্দির ঘিরে ভিড় করছেন পর্যটকেরা। কিন্তু অভিযোগ, তেমন পরিষেবা মিলছে না পর্যটকদের।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের পূর্ব জটা গ্রামে রয়েছে প্রায় ৯০ ফুট উঁচু, ১১০ ফুট চওড়া এই শিবের মন্দির। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিস্তীর্ণ এলাকা এক সময়ে গভীর জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বকালে জঙ্গল কাটার সময়ে মন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ গবেষণা করে জানতে পেরেছে, প্রায় হাজার বছর আগে রাজা জয়ন্ত চন্দ্র ওই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরে ছিল একটি শিবলিঙ্গও। মন্দির আবিষ্কারের পরে পাথরের শিবালঙ্গটি মন্দির বাজারের একটি পরিবারের সদস্যেরা তুলে নিয়ে যান। তবে পরে ওই মন্দিরে আবার শিবলিঙ্গ বসানো হয়েছে।
জটার দেউলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের উৎসাহ রয়েছে। প্রতি বছর শীতের মরসুমে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মন্দির দর্শন করতে আসেন। মেলাও বসে যায়। কিন্তু হাজার হাজার দর্শনার্থীকে পরিষেবা দেওয়ার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। অনেকেই এলাকায় এক-দু’রাত থেকে যেতে চান। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই। শৌচালয়, পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ।
বাসিন্দারা জানান, জটার দেউলকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা ছিল, মন্দিরের পাশেই তৈরি হবে থাকার আবাসন। মন্দির চত্বর সাজানোর কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ এগোয়নি। শুধু পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফে মন্দিরটি রং করে মন্দির চত্বর ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সারা বছরই কমবেশি পর্যটক আসেন। পর্যটন কেন্দ্র হলে দোকানপাট, হোটেল, লজ গড়ে উঠত। অনেক বেকার যুবক যুবতী-কাজ পেতেন। এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটত। কিন্তু কিছুই হয়নি। তা ছাড়া, মূল রাস্তা থেকে মন্দিরে যাতায়াতের প্রায় দেড়শো মিটার রাস্তা খুবই সঙ্কীর্ণ। ভিড় হলে মন্দিরের কাছে পৌঁছতেই পারেন না অনেকে। রায়দিঘি থেকে মন্দিরে আসার পথেও প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা খারাপ। পর্যটনের মরসুম শুরু হলেও রাস্তা সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
রায়দিঘির বাসিন্দা, সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পর্যটন কেন্দ্র হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ হালদার বলেন, “প্রতিশ্রুতির নামে ধোঁকাবাজি হয়েছে। এক হাজার বছরের পুরনো মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটত।”
রায়দিঘির বিধায়ক অলোক জলদাতার কথায়, “ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মন্দিরের আশেপাশের এলাকা জুড়ে কোনও খননকার্য করা যাবে না। তবে ওই প্রাচীন মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy