পানিহাটি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
বিল না মেটানোয় প্রায় দু’মাস ধরে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন। নেই ইন্টারনেট সংযোগ। এমনই হাল একটি পুরসভার। এমনকি, অস্থায়ী কর্মীদের বেতন কিংবা দৈনন্দিন খরচের তহবিল— সবই প্রায় শূন্য। অগত্যা গচ্ছিত স্থায়ী আমানতে হাত পড়েছে। পুরকর্মীদের আশঙ্কা, এ বার সেটাও শেষ হবে। কারণ, আগে যেখানে পুরসভার দৈনিক আয় ছিল দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা, সেটাই এখন মেরেকেটে ৪০ হাজার! ফলে পর পর নাগরিক পরিষেবা বন্ধের মুখে। ঠিকাদারদের কয়েক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এমনই অবস্থা শতাব্দীপ্রাচীন ‘এ-গ্রেড’ তকমা পাওয়া পানিহাটি পুরসভার। যা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিরাই।
পুরসভার টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জরুরি পরিষেবার জন্য ফোন করার উপায় নেই বাসিন্দাদের। উত্তর শহরতলির বিটি রোডের দু’ধারে ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে পানিহাটি পুরসভার জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। খোদ পুরপ্রতিনিধিদেরই অভিযোগ, যত দিন যাচ্ছে, আরও বেশি ধুঁকছে পুরসভা। পরিষেবার মান তলানিতে ঠেকেছে। পুরসভাকে কী ভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, সম্প্রতি সে জন্য পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান, পাঁচ জন চেয়ারম্যান পারিষদ এবং দুই শহর সভাপতিকে (দু’জনেই পুরপ্রতিনিধি) নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়েছে। বুধবার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে কমিটির বৈঠকেও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। সূত্রের খবর, পুরপ্রধান মলয় রায় বরাবর চুপ থেকেছেন। সব বিভাগের প্রধান আধিকারিকেরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। পুরসভা সচল হওয়া নিয়ে তাঁরাও সন্দিহান।
রামচন্দ্রপুরের ভাগাড় অন্যত্র সরানোর দাবিতে মাসব্যাপী আন্দোলন চলছে। যার জেরে পানিহাটিতে আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ। গলি থেকে রাজপথ, সবই এখন কার্যত ভাগাড়। তার মধ্যে একের পর এক অচলাবস্থা। টাকার অভাবে আটটি পুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা পড়ার উপক্রম। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা পুরসভায় যান।
সূত্রের খবর, ১৭০০ মতো অস্থায়ী কর্মীর বেতন-সহ অন্যান্য খরচের জন্য যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল, তা কার্যত ফাঁকা। অগত্যা অন্য ব্যাঙ্কে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতে হাত পড়েছে। অভিযোগ, মিউটেশন ও বিল্ডিং প্ল্যানের টাকা একটি শ্রেণি সকলের অগোচরে কমিয়ে দিচ্ছে। তাতে রাজস্ব আদায় ধাক্কা খেয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া মিউটেশন ফি-র নির্দেশিকা আজও পৌঁছয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগে। কর্মীদের একাংশই দুর্নীতির তদন্তের দাবি তুলেছেন।
কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাবে ফেরত যাচ্ছে প্রকল্পের টাকা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কয়েক কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিগত পুর বোর্ডের সময়ে ভাগাড় সংলগ্ন খাস জমি বিক্রি করেছে শাসকদলের মদতপুষ্টেরা।
পুর ঠিকাদারেরা অভিযোগ তুলেছেন দীর্ঘদিন টাকা বকেয়া থাকার। পানিহাটি পুরসভার ‘সিভিল কন্ট্র্যাক্টর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মাধব নন্দী জানান, ২০১৭-’১৮ সাল থেকে ১৩২ জন ঠিকাদারের মোট বকেয়া রয়েছে ৪৫ কোটি টাকার মতো। তিনি বলেন, ‘‘দরপত্র ডেকে কাজের বরাত দেওয়া হচ্ছে। বিল হচ্ছে। কিন্তু টাকা প্রদানের সময়েই অজ্ঞাত কারণে কাগজের গরমিলের কারণ দেখানো হচ্ছে।’’ জল বিভাগের ৫০ জন ঠিকাদারের দাবি, তাঁদের বকেয়া প্রায় চার কোটি। তাই রাস্তা সংস্কার, পানীয় জলের পরিষেবা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে ‘আত্মহত্যা’র হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন ঠিকাদারেরা।
অথচ, পুরসভার সামগ্রিক বেহাল অবস্থা নিয়ে মন্তব্যে রাজি নন পুরপ্রধান। তবে উপ-পুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বৈঠক করেছি। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy