Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Social Work

সিগারেট খেতে বারণ করায় ট্রেন থেকে ফেলে দিচ্ছিল, তবু পরিবেশ আন্দোলন ছাড়েননি অরিন্দম

বাধা যতই আসুক, সহযাত্রী প্লাস্টিক ব্যবহার করলে তাঁকে বুঝিয়ে বলেছেন, কেন প্লাস্টিক ব্যবহার অনুচিত। ট্রেনের কামরায় ধূমপান বন্ধ করিয়েছেন।

শিক্ষক অরিন্দম দে।

শিক্ষক অরিন্দম দে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ১৭:৫৩
Share: Save:

সাইকেলে লেখা পরিবেশ রক্ষার প্রতিজ্ঞার কথা। বিয়েবাড়িতে নবদম্পতির হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন গাছের চারা। কুসংস্কার দূর করতে ক্লাসের বাইরেও শিক্ষকধর্ম পালন করেন তিনি। ছাত্রদের বলেন গাছ রোপনের কথা, প্লাস্টিক বর্জনের কথা। সাহিত্যের শিক্ষক, কিন্তু বিজ্ঞানচেতনা গড়তে দীর্ঘদিন নিরলস লড়াই করে চলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাসিন্দা অরিন্দম দে।

বাবা হরিপদ দে গোবরডাঙা অঞ্চলে বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামে তিনটি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার বালক বিভাগের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেই বিদ্যালয়েই অরিন্দমের মাধ্যমিক। গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজে থেকে সাম্মানিক স্নাতক, তার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন।

বিদ্যালয়ে পড়াকালীন অরিন্দম গোবরডাঙার স্থানীয় সায়েন্স ক্লাব গোবরডাঙা যুব বিজ্ঞান সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। সকলের জন্য বিজ্ঞান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করবার দাবি নিয়ে রাজ্যের নানা জেলায় সাইকেল অভিযানে নেতৃত্ব দেন। স্বীকৃতি হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের নেহরু যুব কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২০০১ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ যুবকের সম্মানও পান তিনি।

উপহার দিচ্ছেন গাছ।

উপহার দিচ্ছেন গাছ। নিজস্ব চিত্র

শুরু হয় শিক্ষকতা জীবন। সমমনস্ক ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তোলেন সামাজিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সচেতন বিজ্ঞানমনস্ক একটি নিজস্ব নতুন বিজ্ঞান ক্লাব ‘এষণা বিজ্ঞান মঞ্চ'। পরবর্তীকালে তা রূপ পায় 'এষণা পরিবার'-এর। যার তিনটি বিভাগ- বিজ্ঞান মঞ্চ, প্রকাশ মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ। ‘এষণা বার্তা’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করে সেই সংস্থা। প্রকাশনা থেকে ‘এষণা ফিরে ভাবি’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। এর পাশাপাশি চলতে থাকে বিজ্ঞানমনস্কতা প্রচারের অনুষ্ঠান। চলে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইও। সকালে স্কুল, বিকেলে একের পর এক অনুষ্ঠান, সমাজ সচেতনতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন সদাহাস্য বাংলার মাস্টারমশাই। বিজ্ঞান সচেতনতার অনুষ্ঠান, পরিবেশ রক্ষার লড়াই, কুসংস্কার বিরোধী লড়াই, নাটক।

আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘যা শিখেছি, তা বাবার থেকেই। মানুষকে সচেতন করতে হবে, বাবা শিখিয়েছেন। অনেক বাধার মুখে পড়েছি, কিন্তু থামিনি। আমার মনে আছে, এক বার একটি শো করে ফিরছি। ট্রেনের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক জন ধূমপান করছিলেন। আমি বারণ করি। তিনি শোনেননি। আমি তার পরেও একাধিক বার বলায় আমাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এক হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। কোনও মতে সে দিন বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু জেদ ছাড়িনি। এখন ট্রেনে যে কামরায় উঠি, আমাকে দেখেই ধূমপায়ীরা হতাশ হন।’’

সাপ নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে ও ছাত্রদের সঙ্গে।

সাপ নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে ও ছাত্রদের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

বাধা যতই আসুক, তার পরেও রোজই হাসিমুখে স্কুলে গিয়েছেন। সহযাত্রী প্লাস্টিক ব্যবহার করলে তাঁকে বুঝিয়ে বলেছেন, কেন প্লাস্টিক ব্যবহার অনুচিত। ট্রেনের কামরায় ধূমপান বন্ধ করিয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যেও গড়ে তুলেছেন সচেতনতা, যাতে তাঁরা ধূমপান না করেন। সচেতনতা অনুষ্ঠানে সঙ্গে নিয়েছেন স্ত্রীকে। উদ্বুদ্ধ করেছেন সন্তানদের। যাতে তারা কলেজে সহপাঠীদের মধ্যে পৌঁছে দেয় পরিবেশ রক্ষার বার্তা। ছাত্ররাও অরিন্দমের সঙ্গে লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছে। তাঁদের জন্যই আজ কাজে আরও অক্সিজেন পান তিনি। মানুষকে তিনি একই কথা বুঝিয়ে চলেন, ‘‘যদি আজ পরিবেশ রক্ষা করি, তা হলে বাঁচবে পরের প্রজন্ম। তাদের জন্য আমাদের পরিবেশ রক্ষার কাজ করে যেতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Social Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy