Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ফের কড়া লকডাউন, মানা হবে তো, উঠছে প্রশ্ন

বর্তমানে মাস্ক এবং দূরত্ববিধি যেন ভিনগ্রহের বস্তু। লকডাউনের শুরুতে যেভাবে পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে কিন্তু সেই সক্রিয়তা উধাও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০০:২০
Share: Save:

মিছিল-মিটিং, অবরোধ-বিক্ষোভ, হাতাহাতি-সংঘর্ষ, মঞ্চ বেঁধে দলবদল— সবই চলছে। যেমনটা চলত আগে। আনলক পর্বে বেশ কিছু বিধিনিষেধের কথা বারবার বলা হয়েছিল। এমনকী, মোবাইলের কলার টিউনেও সেই সাবধানবাণী। কিন্তু তাতে কী? বাজারহাট, বাস-অটো সবেতেই ঘেঁষাঘেঁষি।

বর্তমানে মাস্ক এবং দূরত্ববিধি যেন ভিনগ্রহের বস্তু। লকডাউনের শুরুতে যেভাবে পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে কিন্তু সেই সক্রিয়তা উধাও। ত্রাণ দেওয়া তো ছিলই, গত দু’সপ্তাহে যেভাবে ব্যারাকপুর এবং বনগাঁ মহকুমায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে তাতে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া লকডাউন মেনে চলা মানুষদের আর কোও উপায় ছিল না। তাঁদের আশঙ্কাকে সত্যি করে করোনার থাবা চওড়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনায় রোজ গড়ে ১৫০-২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রোজই মৃত্যু হয়েছে করোনা-আক্রান্তের। বেশিরভাগ দিন একাধিক।

বসিরহাট মহকুমায় ৩টি পুরসভা এবং ১০টি ব্লক। বসিরহাটে দু’জন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ব্লক অফিসের দুই আধিকারিক এবং সাত পুলিশকর্মীও আক্রান্ত। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মহকুমায় এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬০। এর মধ্যে ৮৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। সুস্থ হয়ে ২২৭ জন বাড়ি ফিরেছেন। বসিরহাট পুর এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি।

বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, “পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ জন। এর মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।” মাটিয়া এবং বাদুড়িয়া থানা এলাকাতে আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। বসিরহাটে কোভিড হাসপাতাল মাত্র একটি। আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করার পর বুধবার থেকেই পুলিশ মাইকে করে প্রচার শুরু করেছে।

পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতেই বনগাঁ মহকুমায় বাড়তে শুরু করেছিল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। আনলক পর্বেও পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। বুধবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬ জন। পাশাপাশি হাবড়া-অশোকনগর-গোবরডাঙা এলাকাতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই তিন এলাকার প্রায় ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। বাকি আক্রান্তের ক্ষেত্রে মিলেছে কলকাতা-যোগ। তার পরেও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতার বালাই নেই। আমপানের পর বিদ্যুৎ-ত্রাণ-ক্ষতিপূরণ দূর্নীতিতে জমায়েত করে বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে। গত দু’সপ্তাহে কখনও বিজেপি, কখনও তৃণমূল মঞ্চ বেঁধে দলবদলের কর্মসূচি করেছে। তাতে হাজির থেকেছেন তাবড় নেতারা।

জেলার মধ্যে ব্যারাকপুর মহকুমায় আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এই মহকুমায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। মহকুমার বেশিরভাগ এলাকা কলকাতা লাগোয়া বলে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি বড় কারণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে গণপরিবহণে গাদাগাদি ভিড় সংক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়েছে। ট্রেন বন্ধ বলে এখন বাসই ভরসা। আর বাসের সংখ্যা কম বলেই গাদাগাদি করে যাত্রীরা যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার উল্টো ছবিও রয়েছে। রাস্তায় অকারণ ঘোরাঘুরি এবং দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে জটলা দিনদিন বাড়ছে। মাস্ক না পরে বাইরে বেরোনো চলছে অহরহ। নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত পুলিশকে সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। গত দু’সপ্তাহে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংও বেড়েছে। হালিশহরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ এবং পাল্টা অবরোধ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায় বোমাবাজি এবং গুলির ঘটনাও ঘটেছে। নতুন করে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে পুলিশ অবশ্য সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছে। আপাতত সেটাই ভরসার। তা না হলে লকডাউন ঘোষণায় যে লাভ কিছু হবে না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy