ক্ষতি: ডুবেছে চাষের জমি। নষ্ট ফসল। ফাইল চিত্র
চাষের জমি থেকে মঙ্গলবারও জল নামেনি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে ধান, আনাজের বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়।
মূলত কৃষি নির্ভর এই জেলায় চাষে ক্ষতি হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। এই জেলার বিভিন্ন ব্লকে ধান জমা জলে নুয়ে পড়ে রয়েছে। পচনও ধরেছে। সব চেয়ে সমস্যায় পড়েছেন ছোট চাষিরা, যাঁরা মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির জন্য সরকার যদি কৃষি ঋণ মকুবও করে, তা হলে লাভবান হবেন জমি মালিকেরা। কিন্তু যে সব ছোট চাষি মহাজন বা ছোট সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পাকা ধান ঘরে তোলার তোড়জোড় করছিলেন, বুলবুলের দাপটে তাঁদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারেও বারাসত, আমডাঙা, দেগঙ্গা, বসিরহাট, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটায় ধান ছাড়াও শীতকালীন আনাজ, সর্ষে, ফুল, পেঁপে ও কলা চাষের জমি থেকে জল সরেনি। কোথাও এক-দেড় ফুট জলের নীচে ডুবে রয়েছে ফসল।
জেলায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৬৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে ধান ১ লক্ষ ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, সর্ষে ১০ হাজার ৭৬০ হেক্টর, ডাল ২৮ হেক্টর, শীতকালীন আনাজ ২২ হাজার হেক্টর এবং অন্য আনাজ ২৮০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ দিন জেলা কৃষি আধিকারিক অরূপ দাস জানান, বিশেষত নিচু এলাকায় ঝড়ের দাপটে পাকা ধান জমা জলে নুয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘টানা বৃষ্টির জন্য জমিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় শীতকালীন আনাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খরিফ মরসুমে জমিতে বোনা সর্ষে, কলা ও পেঁপে চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ কৃষি দফতরের কর্মীরা এলাকায় গিয়ে যত রকম ভাবে সাহায্য করা যায় তা করছে বলেও জানান কৃষি আধিকারিক।
এ দিন দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা ১ পঞ্চায়েতের মির্জানগরের আব্দুল খতিব মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী এক হাঁটু জলে নেমে ডুবে থাকা ধানের আঁটি বেঁধে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এলাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা থেকে স্বামী ও স্ত্রী মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন খতিব। বললেন, ‘‘মালিকের জমি লিজে নিয়ে চাষ করছি। ভেবেছিলাম ধান তুলে বিক্রি করে ঋণের টাকা শোধ করব। এখন কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।’’ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তাঁর স্ত্রী। বললেন, ‘‘ঋণ শোধ না করতে পারলে কী ভাবে সংসার, দুই মেয়ের স্কুলের খরচ চালাব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’
একই অবস্থা চৌরাশি পঞ্চায়েত এলাকায়। বিঘার পর বিঘা ধান চাষের জমিতে জমে রয়েছে জল। পাকা ধান জলে হাবুডুবু খাচ্ছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মণ্ডল। মায়ের নামে কিসান ক্রেডিড কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। সেলিম বলেন, ‘‘কিছুতেই জল নামছে না। সব শেষ। কী করে ঋণ শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy