এরকম টিনে ঘেরা কাঁচা বাড়িতেই থাকেন বহু মানুষ। নিজস্ব চিত্র
এলাকার অনেক বাড়িই এখনও কাঁচা। অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও সরকারি প্রকল্পের পাকা বাড়ি মেলেনি। কিছু বাড়িতে পাকা শৌচাগারও নেই। বহু মানুষ একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা পাননি। রাস্তা-ঘাট, নিকাশি, পানীয় জল, শিক্ষা পরিকাঠামো নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে বাগদার প্রত্যন্ত কুঠিবাড়ি এলাকার মানুষের।
সোমবার দুপুরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই কুঠিবাড়িতেই এসেছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। মন্ত্রীকে হাতের নাগালে পেয়ে বঞ্চনার কথা শোনান গ্রামের মানুষ। মন্ত্রী মন দিয়ে শোনেন গ্রামের মানুষের অভাব অভিযোগ। সে সব কথা লিপিবদ্ধ করে রাখেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দেন। গ্রামের একটি আদিবাসী পরিবারে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁ পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলার দেবদাস মণ্ডল।
মন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পর আদৌ কি কিছু পরিবর্তন হবে, এই চিন্তাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রামবাসীদের মনে। অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, মন্ত্রীর সফর নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছু নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় প্রায় ২০০ আদিবাসী পরিবার বসবাস করে। অভিযোগ, বেশিরভাগ মানুষের পাকা বাড়ি নেই। দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চলে। এলাকায় কোনও মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নেই। ফলে অনেকেই মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। গ্রামের বাসিন্দা জ্যোৎস্না সিংহ বলেন, “টিনের ঘরে ৬ জন সদস্য নিয়ে থাকতে হয়। পঞ্চায়েতে পাকা বাড়ির জন্য আবেদন করেছি। নথিপত্র জমা করেছি। তারপরও পাকা বাড়ি পাইনি। ঝড় বৃষ্টিতে দুর্দশার শেষ থাকে না।” আরও এক বাসিন্দা সবিতা রায় বলেন, “নামেই আমরা আদিবাসী। কিন্তু কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই না। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে চার মাস কাজ করেও টাকা পাইনি। ভোটের আগে কত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় আমাদের। একবার ভোটে জিতে গেলে আমাদের কেউ দেখে না।” স্থানীয় একটি বিড়ি কারখানায় এলাকার গরিব মহিলারা কাজ করেন। কারখানার মালিক অনুপকুমার বিশ্বাস বলেন, “এলাকায় অনেক বিধবা মহিলা আছেন। দিনমজুরি করে বেঁচে আছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না।”
শান্তনু এ দিন খাওয়া দাওয়া করেছেন বৃদ্ধা নন্দরানি সিংহর বাড়িতে। নন্দরানি জানান, মন্ত্রীকে ঠাকুরনগরে গিয়ে বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ করে এসেছিলাম। আমরা কী পরিস্থিতিতে বেঁচে আছি তা মন্ত্রীকে দেখাতে চেয়েছিলাম। এ দিন মন্ত্রীকে শাঁখ বাজিয়ে ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান গ্রামের মহিলারা। দাওয়ায় বসে ভাত, মুড়িঘণ্ট, বাঁধাকপি, বুনো আলুর তরকারি দিয়ে ভাত খান শান্তনু। নন্দরানির টিন-টালির বাড়ি। স্বামী মারা গিয়েছেন। পরিবারে সদস্য ৪ জন। নন্দরানি নিজে খেতমজুরি করেন। একদিন কাজ করলে মেলে ২৫০ টাকা। তাও মাসে মাত্র ১৫ দিন কাজ থাকে। তিনি বলেন, “পাকা বাড়ির জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করেও পাইনি।”
ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির বিকাশ রায় বলেন, “বিরোধী দলের সদস্য হয়ে পঞ্চায়েত থেকে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দিতে পারি না। আদিবাসীরা বঞ্চিত। রাজা আসে, রাজা যায় আমাদের কোনও উন্নয়ন হয় না।”
শান্তনু বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে গরিব মানুষদের বঞ্চনা করা হয়েছে। আমার আয়ত্তের মধ্যে যতটা আছে করব। বাকিটা পঞ্চায়েতের উপর চাপ সৃষ্টি করে কীভাবে করানো তা আমরা দেখছি।” তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় পঞ্চায়েত কাজ করছে না বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সৌমেন ঘোষ বলেন, “গত বছর অগস্ট মাসে আমি প্রধান পদে বসেছি। গত এক বছর ধরে কেন্দ্র সরকার পাকা বাড়ি ও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা দেয়নি। গরিব মানুষদের নাম পাকা বাড়ি পাওয়ার তালিকায় আছে। টাকা পেলেই দিয়ে দেওয়া হবে।” বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “কেন্দ্র টাকা দেয়নি বলে বাড়ি দেওয়া যায়নি। এখন সমীক্ষা চলছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাড়ি দিয়ে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy