কুল চাষ করছেন আবু। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ‘আপেল কুল’। মিষ্টি স্বাদের, প্রায় আপেলের মাপের সবুজ এই কুল অনেকেরই খুব পছন্দের। তবে এবার এই আপেল কুলকে পিছনে ফেলে বাজার দখল করছে দেগঙ্গার ‘সুন্দরী লাল কুল।’
সবুজ রঙের আপেল কুলের বাজার দর ১৫ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি। আর সুন্দরী আপেল কুলের দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এই কুলের অন্যতম কারিগর দেগঙ্গার চাকলা পঞ্চায়েতের মঞ্জিলআটির আবু সহিদ বিশ্বাস। এলাকায় যিনি বাবলু নামে পরিচিত। ২০০৮ সালে বসিরহাটের আমিনুলের হাত ধরে এ রাজ্য তথা ভারতে প্রথম আসে আপেল কুল। তাইল্যান্ডের আপেল এবং দেশি কুলের সংকরায়ণে তৈরি আপেল কুল বাংলাদেশ থেকে বসিরহাটে এনেছিলেন আমিনুল। তারপর দেগঙ্গার বাবলুর দায়িত্ব পড়ে তার থেকে চারা তৈরির। এরপর বাবলুর হাত ধরেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আপেল কুল চাষ। বাজারও দখল করে।
বছর খানেক আগে এই চাষের সাফল্য দেখতে চাকলায় বাবলুর বাগানে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ চৌহান। সারা ভারতে চাষিদের মধ্যে আপেল কুল চাষের প্রবণতা মনের জোর বাড়ায় বাবলুর। আরও আটটি প্রজাতির কুলের চারা তৈরি করেন তিনি। সেখান থেকেই সাফল্য মেলে সুন্দরী লাল কুলের। বর্তমানে এই জেলায় নীলগঞ্জ, দত্তপুকুর ও দেগঙ্গার মঞ্জিলআটিতে কয়েক বিঘা জমিতে এই কুলের চাষ করছেন বাবলু। তাঁর কথায়, ‘‘এক একটি ফলের ওজন ৫০ থেকে ৯০ গ্ৰাম। গঠন সুন্দর, খেতে সুস্বাদু, সংরক্ষণও করে রাখা যায় অনেক দিন। তার ফলেই ক্রেতাদের নজর কাড়ছে এই কুল।’’জেলা কৃষি দফতরে বাবলু জানিয়েছেন, এই কুল চাষ লাভজনকও বটে। এক বিঘা জমিতে ১৮০টি চারা রোপন করে ৬ মাসের মধ্যে ফল উৎপাদন সম্ভব। এক একটি গাছে ৪০ থেকে ৭০ কেজি ফল উৎপাদন হয়। বাজার দর অনুযায়ী বিঘাতে এক লক্ষ টাকা লাভ করতে পারেন চাষি। পাশাপাশি বাড়ির টবেও এই কুলের চাষ সম্ভব বলে দাবি তাঁর।
বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভাশিস কুণ্ডু বাবলুর কুল বাগান পরিদর্শন করে জানান, লাল সুন্দরী কুলের মিষ্টতা বেশি। এই চাষে সাফল্য আসবে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক শুভদীপ নাথ বলেন, ‘‘কুলের গঠন সুন্দর, আকারে প্রায় ৬০ থেকে ৯০ গ্ৰাম হওয়ার পাশাপাশি সুস্বাদু। ফলে বাজারে ক্রেতার মন কাড়ছে।’’
সবুজ আপেল কুলের থেকে এই সরস্বতী পূজায় সুন্দরী লাল কুলের বিক্রি বেড়েছে ফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বেড়াচাঁপার ফল ব্যবসায়ী তয়িম আলি, বাবাই সাধুখাঁ বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে আপেল কুল কেনার ভিড় বাড়ত ফলের দোকানে। এখন তারা সুন্দরী লাল কুলের সন্ধান করছেন।’’ দেগঙ্গার একটি স্কুলের ছাত্রী পারমিতা ঘোষ বলে, ‘‘লাল কুল দেখতে আপেলের মতো, খেতেও মিষ্টি। সরস্বতী পুজোও হচ্ছে লাল সুন্দরী কুল দিয়ে। পুজো শেষ হলেই খাওয়া শুরু করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy