ভেঙে পড়েছে মৃতের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
বাঘ-কুমিরের আক্রমণে সুন্দরবনে প্রতি বছরই হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু সরকারি ক্ষতিপূরণ!
বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা এমনই দু’জনের অভিযোগ, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি। বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের বইটা বাঙির জঙ্গলে বাঘের হানায় মৃত্যু হয় মৈপীঠের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের বর্ণধর মণ্ডল নামে আরও এক মৎস্যজীবীর। ফলে, ফের একবার ক্ষতিপূরণের দাবি জোরালো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর দাবি, এই নিয়ে চলতি বছরে সুন্দরবনে বাঘ-কুমিরের আক্রমণে প্রায় ১১ জনের মৃত্যু হল। আহতও হয়েছেন কয়েক জন। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ মিলছে না। অবিলম্বে হতাহতদের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
গত জুলাই মাসে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হন কুলতলির হরিপদ দাস। ঘাড়ে-মাথায় চোট নিয়ে প্রায় ছ’মাস ধরে তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বছর আটেকের ছেলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে স্ত্রী অনিতা নিয়মিত হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। অনিতা বলেন, “ক্ষতিপূরণ মেলেনি। প্রশাসনের কেউ পাশে এসেও দাঁড়ায়নি। একাই যা করার করছি। স্বামীকে কবে ছাড়া হবে, ডাক্তাররা স্পষ্ট করে কিছুই বলছেন না। ওঁর রোজগারেই সংসার চলত। ছোট ছেলেকে নিয়ে জানি না কী করব!” একই পরিস্থিতি কুলতলির আরও এক বাসিন্দা শুকদেব সাঁফুইয়েরও। চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসাধীন তিনি। একই অভিযোগ তাঁর পরিবারেরও।
এপিডিআর-এর অভিযোগ, নানা অজুহাতে জখম বা মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না সরকার। সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদক মিঠুন মণ্ডলের দাবি, বাঘের হানায় মৃত্যুতে ৫ লক্ষ ও ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তদের ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। কিন্তু বন দফতর কোর এলাকা ও বাফার এলাকার বিভাজন দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, অনুমতি ছাড়া কোর এলাকায় ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ মেলে না। অথচ, সম্প্রতি একটি রায়ে কলকাতা হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, বাঘের আক্রমণে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোর বা বাফার এলাকার বিভাজন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, “এ দিন মৃত বর্ণধরের ছ’বছরের মেয়ে রয়েছে। পরিবার তাঁর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল। হরিপদ, শুকদেবদের পরিবারও অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সরকারের উচিত পাশে দাঁড়ানো।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় বাঘে আক্রান্ত হয়েছে, এমন তিনটি পরিবার। তিনটে ক্ষেত্রেই আদালত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়। মিঠুন বলেন, “আদালতের নির্দেশে তিনটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। যাঁরা আদালত পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না, তাঁরা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy