প্রায় দু’বছর ধরে বার্ধক্য ভাতার জন্য কখনও ব্লক প্রশাসনের দফতর, কখনও দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে ঘুরছেন সালেহা বিবি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। সালেহা বলেন, ‘‘মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ায় আমি একা হয়ে পড়েছি। সংসারে কোনও আয় নেই। আমার ৭০ বছর বয়স। শারীরিক ভাবে অসুস্থ। বার্ধক্য ভাতার জন্য বহু দিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না। টাকাটা পেলে অন্তত ওষুধ খেয়ে বাঁচতে পারি।’’শুধু সালেহা নন, দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্য ভাতা থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার প্রবীণ নাগরিক। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অনুদান মিললেও বার্ধক্য ভাতা নিয়ে চলছে জটিলতা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, জীবনতলা ক্যানিং-সহ একাধিক এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বার্ধক্য ভাতা না পেয়ে হয়রান হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি পোর্টাল বন্ধ থাকায় নতুন আবেদন জমা পড়লেও তা অনলাইনে নথিভুক্ত করা যায়নি। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষত, ভাঙড় ২ ব্লকে প্রায় ৬,৭০০ বার্ধক্য ভাতার আবেদন জমা থাকলেও আজও তা অনুমোদিত হয়নি। শুধু গত দশ মাসেই ব্লকে ১,৬০০ নতুন আবেদন জমা পড়েছে, যা এখনও সরকারি পোর্টালে নথিভুক্ত করা যায়নি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে সরকার পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ায় নতুন আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া থমকে যায়। এই সমস্যার কারণে গোটা জেলা জুড়ে প্রায় ১ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক ভাতা পাননি বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
জীবনতলার বাসিন্দা জলিল মোল্লা বলেন, ‘‘তফসিলি জাতি ও উপজাতির লোকজন তফসিলি বন্ধু ও জয় জোহর প্রকল্পের মাধ্যমে ভাতা পেলেও সাধারণ শ্রেণির পুরুষেরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে স্বস্তির খবর, রাজ্য জুড়ে ফের দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চালু হয়েছে। সেখানে বার্ধক্য ভাতার জন্য বিশেষ কাউন্টার খোলা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে গড়ে ৫০০-৭০০ মানুষ নতুন করে বার্ধক্য ভাতা জন্য আবেদন জমা দিচ্ছেন।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে অনেক অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। ভাঙড় ২ ব্লকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে হাজারখানেক মানুষের বার্ধক্য ভাতা চালু হয়েছে। কিন্তু তারপরে পোর্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিদিকে বলো হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও কোনও কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘পোর্টাল বন্ধ থাকায় এত দিন নতুন আবেদন গ্রহণ করা যায়নি। তবে এখন তা চালু হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)