এই ভাঙাচোরা জেটিঘাট দিয়েই যাতায়াত করতে হয় দেশ-বিদেশ থেকে আসা বহু ভ্রমণার্থীকে।
বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে সুন্দরবন দীর্ঘ দিন ধরেই আকর্ষণের কেন্দ্রে। সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা প্রথমেই পা রাখেন গোসাবা দ্বীপে। এখান থেকেই শুরু হয় রুট ম্যাপ। কিন্তু নিরাপত্তা বা অন্য পরিষেবা— সব দিক নিয়েই ক্ষোভ বিস্তর।
বাদাবনের প্রাচুর্যের জন্য প্রসিদ্ধ গোসাবা। গেঁয়ো, গরান, বাইন, হেতাল, সুন্দরী, কেওড়া,ইত্যাদি গাছ গাছালিতে সমৃদ্ধ এই দ্বীপ-অঞ্চল। নদী-জঙ্গলের টানেই ছুটে আসেন পর্যটকেরা। এ ছাড়াও, তাঁদের দেখার জন্য আছে হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলো, বেকন বাংলো, গির্জা-সহ বিভিন্ন কিছু। তবুও পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষের আক্ষেপ, বহু প্রাচীন জিনিসপত্র ও প্রত্নসামগ্রী থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে গড়ে তোলা হল না কোনও মিউজিয়াম। কালের নিয়মে নষ্ট হয়েছে অনেক কিছুই। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য গোসাবায় হ্যামিল্টন বাংলো, বেকন বাংলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে। এই বাংলোগুলিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যেতে পারত। কিন্তু সে দিকে প্রশাসনের নজর পড়ে না।
বাম আমলে কাঠ পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এখানে। কিন্তু অধুনা তা বন্ধ। এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে পাওয়ার গ্রিডের বিদ্যুৎ। গোসাবা দ্বীপের পানীয় জলের সমস্যা পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এলাকায় কোনও গভীর নলকূপ নেই। গোসাবা দ্বীপ থেকে পাখিরালা যাওয়ার জন্য রাস্তা বেহাল। ভ্যান রিকশা ও কিছু বাতিল অটো পর্যটকদের একমাত্র ভরসা। যা নিয়ে ক্ষোভ আছে পর্যটকদের। অন্য দিকে, পর্যটকদের ওঠানামা করার জেটিঘাটগুলি ভাঙাচোরা। অধিকাংশ জেটি দীর্ঘ দিন সংস্কার হয় না। গোসাবা থেকে গদখালির মধ্যে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য গদখালি ঘাটে একটি ভাসমান জেটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে সেটি জলের তলায় ডুবে থাকে। জেটিঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ দ্বীপে জেটিঘাটগুলির পাশে পর্যটকদের সুবিধার জন্য শৌচালয়েরও দেখা মেলে না।
অযত্নে পড়ে রবীন্দ্র শিশু উদ্যান।
গোসাবা বাজারের অদূরেই ১৯৭৯ সালে রবীন্দ্র শিশুউদ্যান তৈরি করা হলেও তা আজ অগোছালো, ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। উদ্যানের মধ্যে বিনোদনের কোনও ব্যবস্থাই নেই। বন্ধ হয়ে গেলেও বায়োমাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যটকদের কাছে এখনও আকর্ষণের বিষয়।
ইদানীং বড় বড় ব্যবসায়ীরা পর্যটনের প্রসারের নামে ও এলাকার উন্নয়নের নামে হোটেল শিল্পে ঝুঁকছে। কিন্তু পর্যটনের হাল ফেরানোর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গোসাবার এক জনসভায় এসে বলেছিলেন, গদখালি-গোসাবার মধ্যে বিদ্যা নদীর উপরে সেতু নির্মাণ করা হবে। গোসাবার মানুষের কাছে সেতু হলে ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা কলকাতা থেকে সড়ক পথে অনেকটা সুন্দরবনের কাছে পৌঁছে যাবেন। তা ছাড়া, গোসাবার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ কম সময়ে সব্জি-ফসল নিয়ে সহজে শহরের বাজারে পৌঁছতে পারবেন। এ ছাড়া, পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটলে এলাকার আর্থিক উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়বে। সেই বহু প্রতীক্ষিত সেতু তৈরিতে কয়েকবার মাপজোক ও মাটি পরীক্ষা ছাড়া অবশ্য কাজ বিশেষ এগোয়নি।
পাখিরালয়ে এক সময়ে বহু পরিযায়ী পাখি দেখা যেত। ইদানীং দেখা যায় না। পাখিরালয়ে বহু হোটেল গড়ে উঠেছে। বাড়ছে দূষণ। পর্যটকদের দাপাদাপিতে ইকো-সিস্টেম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। সজনেখালিতে একটি সরকারি বন বাংলো আছে। এক পর্যটক ব্যবসায়ী আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পর্যটনের জন্য যে টাকা অন্য রাজ্যে খরচ করে আসি, তার অর্ধেক টাকা যদি সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য খরচ হতো, তা হলে এই এলাকার অর্থনৈতিক চেহারাটাই পাল্টে যেত।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy