খোলা আকাশের নীচে রান্না চলছে। নিজস্ব চিত্র
খোলা আকাশের নীচে উনুনে রান্না হচ্ছে শিশুদের জন্য। পাশেই খাবার নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে শিশুরা। তাদের মাথায় না আছে ছাউনি, না রয়েছে বসার ঘর। খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়াটাই দস্তুর মন্দিরবাজারের ২৩ নম্বর পূর্ব ঝাঁপবেড়িয়া আন্দামান অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের।
নামেই এটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কোনও ভবন নেই। পরিষেবার সবটাই চলে খোলা আকাশের নীচে। প্রায় একই পরিস্থিতি রামভদ্রপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরও। অভিযোগ, বিষয়টি বহু বার জানানো হলেও সমাধান হয়নি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরবাজার ব্লকের নিশাপুর পঞ্চায়েতে সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের অধীনে আন্দামান অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চলছে। আগে একটি ভাঙাচোরা ঘরে কোনও রকমে পরিষেবা মিলত। বেশ কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে নতুন কোনও ভবনের ব্যবস্থা করা হয়নি। কখনও মাঠে, কখনও পড়শির উঠোনে কোনও রকমে চলে রান্না, খাবার বিলি।
এই পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়েছে পড়াশোনাও। অথচ, ওই কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল প্রায় ১৯০ জন উপভোক্তা। এর মধ্যে প্রসূতি ও অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলার সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। বাকিরা ৬ বছরের নীচে থাকা শিশু। কেন্দ্রের সহায়িকা তপতী সাহা জানান, নির্দিষ্ট ঘর না থাকায় পড়শিদের উঠোনে রান্নার কাজ সারেন। কখনও আবার সে সুযোগও মেলে না। তখন রান্না হয় খোলা আকাশের নীচে। সে ক্ষেত্রে সব সময় পরিচ্ছন্ন ভাবে রান্নাবান্না করা যায় না। শিশুদের খাওয়ার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে খাবার নিয়ে বাড়ি চলে যায় তারা। রান্নার জন্য জলও সংগ্রহ করতে হয় বেশ কিছুটা দূর থেকে। কাছাকাছি শৌচালয় নেই। তপতী বলেন, ‘‘বেহাল ভবনের অনেক অভিযোগ শুনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও ভবনই নেই। গোটা প্রকল্প চলছে কোনও আস্তানা, পরিকাঠামো ছাড়া। শিশুরা এক সঙ্গে পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’’
ওই ব্লকের কেচারকুড় পঞ্চায়েতে রামভদ্রপুর ১৭ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিও বেহাল। একটি ভাড়াবাড়ির বারান্দায় প্রায় ৫৫ জন শিশু ও মায়েরা সেখানে পরিষেবা নেন। তালপাতা ঘেরা খড়ের ছাউনি দেওয়া অপরিচ্ছন্ন ঘরে চলে রান্নার কাজ। অনেক সময়ে খড়ের জ্বালানি থেকে ছাই উড়ে এসে পড়ে খাবারে। বৃষ্টি হলে সমস্যা বাড়ে। ওই কেন্দ্রেরও কোনও শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।
মন্দিরবাজার ব্লক জুড়েই কেন্দ্রগুলি পরিকাঠামোর সমস্যায় ধুঁকছে। ব্লকে বর্তমানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৩০৩টি। সেখানে নিজস্ব ভবন রয়েছে ৮৮টির। বাকি কেন্দ্রগুলি কোনওটি পড়শির বারান্দায়, উঠোনে, এমনকী রাস্তাঘাটে দাঁড় করিয়ে পরিষেবা দিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রগুলিতে ঠিকঠাক পরিষেবার কাজ চলছে কি না তা নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য সুপারভাইজার থাকেন। এক জন সুপারভাইজার ২০-২৫টি অঙ্গনওয়াড়ির দায়িত্ব সামলান। কিন্তু এই ব্লকে সুপারভাইজারের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। রয়েছে কর্মী সমস্যা। অনেক কেন্দ্রেই এক জন কর্মী বা সহায়িকা একাধিক কেন্দ্রের দায়িত্ব সামলান।
এ বিষয়ে মন্দিরবাজারের বিডিও কৌশিক সমাদ্দার বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy