আগাছায় ভরা মগরাহাট খাল। নিজস্ব চিত্র।
বাম জমানার শেষের দিকে কংগ্রেসের হয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলি খেতে হয়েছিল। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইটা শক্ত ছিল সেই আমলে। ২০১১ সালে মন্দিরবাজারের তৃণমূল নেতা জয়দেব হালদারের উপরে ভরসা রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাশ করেননি জয়দেব। পরের বিধানসভা ভোটেও জয়ী হন।
তাল কাটে গত লোকসভা ভোটে। এই এলাকায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ২০১৬ সালে বিজেপির ভোট ছিল মাত্র ৮৪৫৩টি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ হাজারে। ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের আলোচনায় উঠে আসে কয়েকটি কারণ। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, জনবিচ্ছিন্নতা, বামেদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে চলে যাওয়া— এই সব কারণই উঠে আসে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে এই এলাকায়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বানচাল করে দেওয়ার সেই চেষ্টা ভাল চোখে দেখেননি মানুষ। শাসক দলের বাহিনী কী ভাবে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র দেওয়া আটকাতে উঠেপড়ে লেগেছিল, তা খালি চোখেই দেখেছিলেন বাসিন্দারা।
সেই ভাবমূর্তি ফেরানোরই লড়াই এখন শাসকদলের কাছে। নিয়ম করে সভা সমিতি করে মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনছেন তাঁরা। সমাধানের চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন অনেকেই।
এক সময়ে মন্দিরবাজার বিধানসভা কেন্দ্রটি সিপিএমের ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। ইদানীং জমি ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা দেখা যাচ্ছে বামশিবিরে। নিয়ম করে সভাসমিতি হচ্ছে। আমপানের পরেও ত্রাণের কাজে বামেদের ঘাম ঝরাতে দেখেছেন সকলেই। ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনও সংগঠিত করেছে তারা।
শাসকদলের বিরুদ্ধে আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে বিজেপিও সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে চলছে। পাড়ায় পাড়ায় কর্মী বৈঠক, সভাসমিতির চলছে তাদেরও।
উন্নয়নের প্রশ্নে প্রচারে বেরিয়ে শাসকদলকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে বলে দাবি বিরোধীদের। বিধানসভা এলাকায় একমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি প্রায়ই খারাপ থাকে। ভাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। ১৪টি পঞ্চায়েত নিয়ে প্রায় তিন লক্ষের বেশি মানুষের বসবাস। অথচ আজও পর্যন্ত কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হল না। একমাত্র ভরসা নাইয়ারাট গ্রামীণ হাসপাতাল। সেখানে আবার একটু জরুরি রোগী হলেই ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ।
এত দিনেও গ্রামে গ্রামে পাইপ লাইনের সাহায্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া গেল না। নিকাশি খাল সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় জলে ডুবে থাকে কিছু এলাকা। আবার গ্রীষ্মে জলের অভাবে চাষ হয় না বলেও বিরোধীদের অভিযোগ রয়েছে। নলকূপের অভাব আছে। বিরোধীদল করলে ভয় দেখানো, অটো, টোটো রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনায় শাসক দলের মদত আছে বলে অভিযোগ আছে বিরোধীদের।
মন্দিরবাজারের বিজেপি নেতা অশোক পুরকাইত বলেন, ‘‘গত সাড়ে ৯ বছরে এলাকার উন্নয়ন দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে। বিরোধী দল যেখানে রয়েছে, সেই এলাকায় সমস্ত উন্নয়ন বন্ধ। শাসকদলের সন্ত্রাসের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, এলাকায় একটা ভাল খেলার মাঠ পর্যন্ত নেই। দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের শ্মশানের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হল না। একটাই মাত্র এটিএম। তা-ও প্রায়ই খারাপ হয়ে থাকে।
সিপিএম নেতা সজল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আজও পর্যন্ত এলাকায় কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠল না। খালগুলি সংস্কারের অভাবে নিকাশি পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামে পাইপ লাইনের জল সরবরাহ নিয়ে দাবি মেটেনি।’’
বিরোধীদের এত কথা কানে তুলতে রাজি নন বিধায়ক। উন্নয়নের ফিরিস্তি শোনান জয়দেব। বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে প্রায় ১০০ কোটি খরচ করে ঢালাই, পিচ ফেলা রাস্তা, সরকারি প্রকল্পের বাড়ি করা হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রায় ১৮০ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাঘাট তৈরি করেছি। গ্রামে গ্রামে স্কুল ভবন তৈরি, পানীয় জলের নলকূপ বসানোর কাজ হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আমার তহবিলের টাকায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রায় ১৪ হাইমাস্ট আলো বসানো বয়েছে। হাঁড়া, মন্দিরবাজার ও মগরাহাট খালের সংস্কার করা হয়েছে।’’ পানীয় জল সরবরাহের বিষয়ে তিনি জানান, ডোঙাড়িয়া-২ জল প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই ১০০ শতাংশ বাড়িতে জল পৌঁছে যাবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ১২ বিঘা জমি দেখা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।
সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে জয়দেবের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা স্রেফ বিরোধিতা করার জন্যই এ সব বলছে। ’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy