গ্রেফতার মামাভাগিনা গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।
শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে শুক্রবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বাগদার মামাভাগিনা গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল। খবর জানাজানি হতেই চন্দনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
পাড়ায় কালীপুজো করতেন চন্দন। প্রচুর মানুষ আসতেন। কলকাতা থেকে প্রচুর গাড়ি যেত বলে সে সময়ে দেখেছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন পরিচিত মুখ ছিলেন বলেও জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষের একাংশ। চন্দন নিজেও নানা সময়ে অনেককে বলেছেন, অনেক ‘উঁচু মহল’ পর্যন্ত তাঁর যাতায়াত।
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য চন্দনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছিল বলে মানছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘উনি কখনও দলের কোনও পদে ছিল না। তৃণমূল কর্মীও ছিলেন না।’’ বিশ্বজিতের দাবি, চন্দন সিপিএম করতেন। সিপিএমে থাকাকালীনই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। চন্দনের বাড়িতে তৃণমূলের ‘প্রভাবশালী’ লোকজনের যাতায়াত ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে যে কথা জানা যাচ্ছে, তা নিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কারও বাড়িতে বা কোনও পুজো-অনুষ্ঠানে যেতেই পারেন।’’
এলাকার বাসিন্দারা অনেকে জানান, বাম আমলে চন্দন সিপিএম করতেন বলেই তাঁরা জানেন। সে সময়ে স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকের চাকরিও পান। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। তবে তৃণমূলের কর্মসূচিতেও তাঁকে সে ভাবে দেখা যেত না বলে জানালেন স্থানীয় অনেকে।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বাগদার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘এক সময়ে সকলেই সিপিএম করতেন এ রাজ্যে। ২০১১ সালের পরে যখন দালালরাজ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তৃণমূলের বহু নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে চন্দনের যোগাযোগ ছিল। তাবড় নেতা-প্রভাবশালীরা চন্দনের বাড়িতে আসতেন। না হলে চন্দনের প্রভাব বেড়েছিল কী করে?’’
বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা বিজেপি নেতা অমৃতলাল বিশ্বাসেরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে, তৃণমূল নেতাদের ইন্ধনে চন্দন মণ্ডল বেআইনি কাজ করতেন। মুখ্যমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও চন্দনের বাড়িতে কালীপুজো উপলক্ষে এসেছিলেন।’’
এ দিন চন্দনের সম্পর্কিত এক ভাই বলেন, ‘‘উনি খুবই সাধারণ মানুষ। কাউকে কোনও সরকারি চাকরি দিতে পারেন না। প্রশাসনের আধিকারিক ও মন্ত্রীরা ছাড়া সরকারি চাকরি হতে পারে না।’’
শুক্রবার গ্রামে গিয়ে দেখে গেল, জায়গায় জায়গায় জটলা। আলোচনার কেন্দ্রে চন্দনই। অনেক দিন ধরে বাড়িতে নেই তিনি। স্ত্রী-মেয়ে থাকতেন। সিবিআই-ইডি তল্লাশি চালিয়ে গিয়েছে বাড়িতে। তার পর থেকে তাঁরাও নিয়মিত থাকেন না। এ দিনও বাড়িতে তালা ঝুলছিল।
চন্দনের গ্রেফতারের কথা জানতে পেরে বাসিন্দারা অবাক নন। বরং কেন এত দিন চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়নি, সেটাই ভাবাচ্ছে তাঁদের অনেককে। তাঁদের কেউ কেউ জানালেন, প্রাক্তন এক মন্ত্রীর সঙ্গে চন্দনের ওঠাবসা ছিল। মন্ত্রীর আত্মীয়েরা চন্দনের বাড়িতে আসতেন। চন্দন গাড়ি ভর্তি করে ফল পাঠাতেন। সে গাড়িতে বস্তাও তুলতে দেখেছেন কেউ কেউ। বস্তায় করে টাকা পাঠানো হত কি না, এখন তা নিয়েও চলছে চর্চা।
চন্দনের গ্রেফতারের পরে বাগদার মানুষ দাবি তুলছেন, তাঁর হয়ে যাঁরা চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষের কাছ থেকে সরাসরি টাকা তুলতেন, তাঁদের গ্রেফতার করা হোক। চন্দনের সেই সব সাগরেদরা এখনও এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরছেন বলে জানা গেল। অনেকেই পাকা বাড়ি করেছেন। এক জন বড় গাড়ি নিয়ে ঘোরেন।
এক যুবকের কথায়, ‘‘আমি স্কুলে চাকরির জন্য চন্দনকে সরাসরি টাকা দিইনি। তাঁর এক দালালকে দিয়েছিলাম। চাকরি হয়নি। টাকা ফেরত না পেলে এ বার মুখ খুলব।’’ চন্দনকে টাকা দিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁরা আবার ভুগছেন চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে। সব মিলিয়ে গ্রামের বহু পরিবারই আতান্তরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy