Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Gobardanga

মাস্টারমশাইকে বাড়ি নিয়ে এলেন সলমন-সইদুলরা

পুলিশের তৎপরতায় গোবরডাঙার গৈপুর থেকে শিক্ষককে খুঁজে পেলেন তাঁরা। 

মাঝে, কালীপদ পাল। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মাঝে, কালীপদ পাল। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:০১
Share: Save:

নিজেদের কাজকর্ম বন্ধ করে শনিবার সকাল থেকেই মাস্টারমশাইকে খুঁজে চলেছিলেন সইদুল, সলমনরা। কিন্তু কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাদুড়িয়ার বছর পঁয়ষট্টির কালীপদ পালের। অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় গোবরডাঙার গৈপুর থেকে শিক্ষককে খুঁজে পেলেন তাঁরা।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধের বাড়ি বাদুড়িয়া থানার নারায়ণপুর গ্রামে। কালীপদ অতীতে গৃহশিক্ষকতার কাজ করতেন। তিনি ছেলেমেয়েদের ইংরেজি পড়াতেন। মাস ছ’য়েক আগেও ছাত্র পড়িয়েছেন। এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না তিনি।

শনিবার সকাল থেকে কালীপদ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তাঁর তিন মেয়ে। তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী সন্ধ্যা ও কালীপদ থাকেন। সন্ধ্যা নিজে অসুস্থ হওয়াতে স্বামীকে দেখভাল করতে পারেন না।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ গোবরডাঙা থানার গৈপুর এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন এক বৃদ্ধ। বাসিন্দারা তাঁর পরিচয় জানতে চান। বৃদ্ধ নাম ঠিকানা কিছু জানাতে পারেননি। বাসিন্দারা তাঁকে থানায় পৌঁছে দেন। গোবরডাঙা থানার ওসি উৎপল সাহা বৃদ্ধকে জল খেতে দেন। বৃদ্ধ মিষ্টি-মুড়ি খেতে চান। পুলিশ রাতে বৃদ্ধের পছন্দ মতো কালাকাঁদ এনে খাওয়ান।

বৃদ্ধ জানান, তাঁর নাম কালীপদ। বাড়ি বাদুড়িয়া। উৎপল বৃদ্ধের ছবি তুলে বাদুড়িয়া থানায় পাঠিয়ে দেন। রবিবার সকালে বাদুড়িয়া থানার পুলিশ বৃদ্ধের বাড়ি খুঁজে বের করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় শিক্ষক হিসাবে কালীপদ খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্রী। শনিবার নিখোঁজ হওয়ার পর বৃদ্ধের প্রাক্তন ছাত্ররা খোঁজখুঁজি শুরু করেছিলেন। রবিবার সকালে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃদ্ধের প্রাক্তন ছাত্র সহিদুল ইসলাম, প্রতিবেশী আবু সলমন সাহাজি, সুভাসচন্দ্র পালেরা এসে হাজির হন গোবরডাঙা থানায়। প্রিয় মানুষটিকে চোখের সামনে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তাঁরা। পুলিশের তরফে কালীপদকে রুটি তরকারি খাইয়ে বাড়ির পথে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়।

সহিদুল পেশায় হাটে হাটে জুতো বিক্রি করেন। আবু সলমন এলাকায় চায়ের দোকান চালান। কাজকর্ম না করে তাঁরা মাস্টারমশাইয়ের খোঁজে শনিবার থেকে নাওয়াখাওয়া ভুলেছিলেন। সলমন বলেন, ‘‘মাস্টারমশাই সকাল বিকেল আমার চায়ের দোকানে যান। চা বিস্কুট খান। উনি খুব ভাল মানুষ।’’ সহিদুল জানান, অতীতে একবার মাস্টারমশাই নিখোঁজ হয়েছিলেন। সে সময় সোনারপুর থানার পুলিশ তাঁকে খুঁজে দিয়েছিল। তারপর থেকে তাঁর উপর নজর রাখা হয়। এলাকার বাস ও অটো চালকের বলে রাখা হয়েছে তাঁরা যেন মাস্টারমশাইকে গাড়িতে না তোলেন।

এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষই মাস্টারমশাইকে সাহায্য করেন। সলমন বলেন, ‘‘মাস্টারমশাই আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের সকলের পরিচয় আমরা মানুষ। মানুষের বিপদে তিনি জাত না দেখে এগিয়ে যেতেন। দুই সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। এখন তাঁকে আমরা আগলে রাখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gobardanga Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy