একই নামে দু’টি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ যৌথ কমিটি তৈরি করে এ বারের মতুয়া ধর্ম মহামেলার আয়োজন করেছে। আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে হাই কোর্টে শুনানিও চলছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি মহাসঙ্ঘ থেকে ৭ জন করে সদস্য নিয়ে ১৪ জনের যৌথ কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁরাই এ বার মহামেলার আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন।
শুক্রবার হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছে, মহামেলার আয়োজনের দায়িত্ব ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের। মমতা ঠাকুরের আইনজীবী মুকুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে ডিভিশন বেঞ্চের রায়, মহামেলা বন্ধ হবে না। যেমন চলছে, চলবে। মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বেই চলবে। ২০১৮ সাল থেকে ওঁর নেতৃত্বেই চলে আসছে। যদি আবেদনকারী বা তাঁর অনুগামীরা মেলায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বা কোনও রকম অশান্তি করেন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ বার মহামেলা শুরুর আগে আয়োজনের দায়িত্ব কারা পাবেন, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। হাই কোর্টের নির্দেশে একই নামে দু’টি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ কর্তৃপক্ষ জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কাছে নথিপত্র দেখিয়েছিলেন। জেলা পরিষদ থেকে মমতা ঠাকুরের ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘকে’ মহামেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে গত বুধবার হাই কোর্টে শুনানি হয়। মমতা ঠাকুরকেই মেলা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছিল আদালত।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরেরা ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় দেয়। এ বিষয়ে মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘ওঁদের টাকা আছে, খরচ করছেন। লজ্জা থাকলে বার বার আদালতে যেতেন না।’’
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মহা সঙ্ঘাধিপতি তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘‘হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের কপি হাতে না পেয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে আদালত তো রায় দেয় নথিপত্রের উপরে। আমরা চাই, এ বার যেমন যৌথ ভাবে মহামেলার আয়োজন করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও যেন একই ভাবে আমরা আয়োজন করতে পারি।’’ সুব্রতের কথায়, ‘‘কিছু মানুষ আছেন, রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ভাবে কলকাঠি নেড়ে ফায়দা তুলতে চান। সে সব এ বার বন্ধ হয়ে যাবে।’’ মমতা ঠাকুরের বক্তব্য, ‘‘মহামেলার সময়ে ঠাকুর পরিবারের মধ্যে গোলমালে ভক্তেরা ব্যথিত হতেন। এ বার তাঁরা খুশি। আমরাও সুষ্ঠু ভাবে মহামেলার আয়োজন করতে চাই।’’
বৃহস্পতিবার রাতে কামনা সাগরে পুণ্যস্নান শেষ হয়েছে। যদিও মহামেলা চলবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। সুব্রত এবং মমতা দু’জনেই দাবি করেছেন, এ বার প্রায় ৫০ লক্ষ মতুয়া ভক্ত পুণ্যস্নান করেছেন। সেই পর্ব নির্বিঘ্নে মেটায় খুশি ভক্তেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর পুণ্যস্নান করতে এসে দু’টি পরিবারের গোলমালে তাঁরা ‘ব্যথিত’ হতেন। দ্রুত, কোনও রকমে স্নান সেরে ফিরে যেতেন। এ বার অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। যৌথ ভাবে মহামেলার আয়োজন হওয়ায় খুশি পু্ণ্যার্থী থেকে পসরা সাজানো ব্যবসায়ীরা। সকলেরই প্রত্যাশা, এ বার আর অশান্তি নয়, মহামেলা যেন নির্বিঘ্নে কাটে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)