সচেতন: গ্রামের সকলে এগিয়ে এসেছেন কাজে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
গ্রামে ঢোকার মুখে রাজ্য সড়কের দু’পাশে বড় প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘‘প্লাস্টিক মুক্ত শ্রীপুর গ্রামে স্বাগত। এই গ্রামে প্লাস্টিক ব্যবহার করা বা যত্রতত্র ফেলা নিষিদ্ধ।’’
শুধু প্ল্যাকার্ড টাঙিয়েই অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের শ্রীপুর গ্রাম। প্লাস্টিক দূষণ থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে একজোট হয়ে পদক্ষেপ করেছেন গ্রামবাসীরা। মাত্র এক মাসের মধ্যে ‘প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম’ হয়েছে শ্রীপুর।
স্থানীয় একটি ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংস্থা, স্কুল, কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী, পঞ্চায়েত— সকলের সহযোগিতায় গ্রামে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা গিয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন না। বাজারে বিক্রেতারাও আর ক্রেতাদের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিচ্ছেন না। রাস্তাঘাটে কোথাও প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশাসনিক কর্তাদের মুখেও প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে এ গ্রামের মানুষের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। মহকুমা প্রশাসনের তরফে ক্লাবটিকে সম্প্রতি ‘জিরো ওয়েস্ট ক্লাবে’র সম্মান দেওয়া হয়েছে। বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম গড়তে শ্রীপুরের মানুষের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হবে। এ ভাবে মানুষ এগিয়ে এলে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অনেক সহজ হবে।’’
শ্রীপুর গ্রামে প্রায় তিনশো পরিবারের বাস। জনসংখ্যা হাজারের কিছু বেশি। কী ভাবে এত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া গেল সচেতনতার বার্তা? প্রথমে এগিয়ে এসেছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসে গ্রামেরই এক সাংস্কৃতিক সংস্থা, একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ইছাপুর হাইস্কুল, শ্রীপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিলাদের ১৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ইছাপুর ১ পঞ্চায়েত।
ক্লাবের সম্পাদক নিতাই ভট্টাচার্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার অরূপকুমার দাঁ শোনালেন শুরুর কথা। বললেন, ‘‘এ বছর জ্বর-ডেঙ্গি না ছড়ালেও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়েছে। গ্রামের যুবক সঞ্জিত সরকার ভিলেজ রিসোর্স পার্সন (ভিআরপি) হিসেবে কাজ করেন। তিনিই প্রথম আমাদের বলেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। তারপরেই কোমর বাঁধি সকলে।’’
মাসখানেক আগেও গ্রামের পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। যত্রতত্র পড়ে থাকত প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। বাজারেও যথেচ্ছ চলছিল এই ধরনের ব্যাগের ব্যবহার।
এখন কী ভাবে পরিষ্কার হচ্ছে সে সব? অরূপকুমার বলেন, ‘‘গ্রামে রাস্তার পাশে ২২টি ঢাকনা দেওয়া ড্রাম রাখা হয়েছে। বাসিন্দারা এখন সেখানেই আবর্জনা, প্লাস্টিক ইত্যাদি ফেলছেন। তা ছাড়া, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এখন সপ্তাহে দু’দিন করে এলাকায় আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকা প্লাস্টিক আলাদা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্লাস্টিকে জল জমে ডেঙ্গি মশার লার্ভা বংশবৃদ্ধি করে। প্লাস্টিক পরিষ্কার করে আমরা তাই নিজেদের এবং গ্রামবাসীদেরও ডেঙ্গি থেকে রক্ষা করছি।’’ প্রবীণ গ্রামবাসী দুলাল ভট্টাচার্যের মতো অনেকেই মনে করেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় শ্রীপুরে এ বার ডেঙ্গি থাবা বসাতে পারেনি। ইছাপুর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সচেতন করছে। পদযাত্রা, আলোচনা সভা চলছে। ৭০ বস্তা প্লাস্টিকও এর মধ্যে মজুত করা গিয়েছে। ওই ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংস্থার তরফে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, সংগ্রহ করা এই প্লাস্টিক যেন অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy