Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bangaon

অন্ধবিশ্বাসের জেরে রমরমা তান্ত্রিক-ওঝার

পারিবারিক অনটনের কারণে বছর আঠাশের তরুণী মেয়েকে একটি আশ্রমে রেখে এসেছিলেন মা। অভিযোগ, ওই আশ্রমের এক সাধু তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে। মুখ-হাত বেঁধেও ধর্ষণ করত বলে অভিযোগ।

প্রতীকী চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৪
Share: Save:

দু’বছর আগের ঘটনা। বনগাঁ মহকুমা এলাকায় এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক তান্ত্রিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছিল, ৫৩ বছরের ওই তান্ত্রিক এক বছর ধরে তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছিল। মায়ের সঙ্গে তরুণী পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ওই তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে তান্ত্রিক তরুণীকে পেটের যন্ত্রণা কমানোর নামে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে।

আর একটি ঘটনা কয়েক বছর আগের। পারিবারিক অনটনের কারণে বছর আঠাশের তরুণী মেয়েকে একটি আশ্রমে রেখে এসেছিলেন মা। অভিযোগ, ওই আশ্রমের এক সাধু তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে। মুখ-হাত বেঁধেও ধর্ষণ করত বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বনগাঁ থানার পুলিশ ওই সাধুকে গ্রেফতার করে।

জেলায় বিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে জানালেন, এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভন্ড সাধু কবিরাজ, গুনিন, ওঝা। দিন কয়েক আগে এই জেলাতেই গুনিন ও তার সঙ্গীদের ধর্ষণের জেরে বছর পঁচিশের তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংসারে শান্তি ফেরাতে এক গুনিনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই তরুণী। শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রাণ দিতে হয়।

এই পরিস্থিতিতে ওঝা-গুনিনদের বিরুদ্ধে পুলিশি সক্রিয়তার দাবি উঠছে। যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা মনে করেন, কুসংস্কার পুরোপুরি বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। পথেঘাটে তান্ত্রিক-গুনিনদের বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আইনি পদক্ষে করতে হবে।

যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, এখনও বহু মানুষ সাধু-গুনিন-কবিরাজের কাছে ছোটেন। তাঁরা টাকার বিনিময়ে ঝাড়ফুঁক-তুকতাক করে মানুষকে তাবিজ-কবচ দেন। যুক্তিবাদী মঞ্চ রাজ্য জুড়ে এ সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে কাজকর্ম করা বিভিন্ন সংগঠনও মানুষকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন করছে। তারপরেও কিছু মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার লক্ষণ নেই।

অভিযোগ, নানা রকম অপরাধে প্ররোচিতও করে এই সব ওঝা-গুনিনেরা। যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে দেগঙ্গা এলাকায় এক নিঃসন্তান মহিলা সন্তান পেতে তান্ত্রিকের কথা মতো অন্যের দু’টি বাচ্চাকে কীটনাশক খাইয়ে মেরে ফেলেছিলেন। সেই মহিলার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল জনতা। পুলিশ পরে তাঁকে গ্রেফতারও করে।’’

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বনগাঁ, বারাসত, বিধাননগর, ব্যারাকপুরের মতো পাঁচটি মহকুমা জুড়ে প্রদীপেরা নিয়মিত কুসংস্কার বিরুদ্ধে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করেন।

তিনি জানান, সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়, নিখোঁজ কাউকে তান্ত্রিক ফিরিয়ে দিতে পারে না। একমাত্র পুলিশ পারে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলি আপনারা পুলিশের কাছে যান। গুনিনের কাছে গিয়ে শত্রু আটকানো যায় না। তা হলে দেশে অনুপ্রবেশ আটকানো যেত। শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যান। তান্ত্রিক কখনও বলে দিতে পারে না, নিখোঁজ ব্যক্তি কোথায় আছে।’’

কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী মঞ্চ সাফল্যও পেয়েছে। বনগাঁয় এক বাড়িতে যুবকের উপরে দেবতা ‘ভর’ করত বলে খবর চাউর হয়। মঞ্চের সদস্যেরা সেখানে গিয়ে মানুষকে বোঝান। হাতেনাতে সব ধরে ফেলেন। এখন সে সব বন্ধ হয়েছে। যুবকটি এখন ভ্যান চালান।

পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। অভিযোগ পেলেই পুলিশ পদক্ষেপ করে। প্রতারকদের গ্রেফতার করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon Shaman Crime Against Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy