Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Mineral Water

নামেই মিনারেল ওয়াটার, কী খাচ্ছেন জানেন না কেউ

উত্তর ২৪ পরগনার কথাই ধরা যাক। এই জেলায় বেশির ভাগ ব্লকেই পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

জেলার বহু জায়গায় গজিয়ে উঠেছে এমন প্ল্যান্ট। নিজস্ব চিত্র

জেলার বহু জায়গায় গজিয়ে উঠেছে এমন প্ল্যান্ট। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০০:৩৪
Share: Save:

ভূগর্ভের জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের সরকারি প্রকল্পগুলিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই বোতলবন্দি জল কিনে খাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সেই জলেও বিষ! কারণ, বোতলবন্দি জলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে মাটির নীচ থেকে জল তুলে কোনও রকম পরিশোধন প্রক্রিয়া ছাড়াই বোতলে ভরে তা বিক্রি করা হচ্ছে ‘মিনারেল ওয়াটার’ নামে।

উত্তর ২৪ পরগনার কথাই ধরা যাক। এই জেলায় বেশির ভাগ ব্লকেই পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। জেলায় আর্সেনিক-দূষণের জেরে রোগে আক্রান্ত লক্ষাধিক। মৃতের সংখ্যা আড়াইশোর কাছাকাছি। অভিযোগ, সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু জল ব্যবসায়ীরা। সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে পাম্পের সাহায্যে মাটির তলা থেকে প্রতিদিন গ্যালন গ্যালন জল তুলে বোতলে ভরে চলছে বিক্রি। দমদম, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, দত্তপুকুর, ব্যারাকপুর, কদম্বগাছি, আমডাঙা, বসিরহাট, বনগাঁ ও দেগঙ্গা মিলে দেড় হাজারের মতো এমন অবৈধ কারখানা চলছে রমরমিয়ে। সেই জলে থেকে যাচ্ছে আর্সেনিক ছাড়াও নানা জীবাণু।

মাটির নীচ থেকে জল তুলে তা সরাসরি বোতলে ভরে পানীয় জল হিসেবে বিক্রি করাটা পুরোপুরি আইনবিরুদ্ধ। এমন কারখানার অনুমতিও দিতে পারে না পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েত।

কিন্তু এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সমস্ত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পুরসভা বা পঞ্চায়েতের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে জল বোতলে ভরার কারখানা।

বারাসতের নেতাজিপল্লিতে পরপর রয়েছে এমন চারটি কারখানা। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, ভূগর্ভ থেকে জল তুলে একটি যন্ত্রে সামান্য পরিশোধন করে এক লিটারের বোতল ও ২০ লিটারের প্লাস্টিকের জারে ভরার কাজ চলছে। সেই জল পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশেই পানীয় জল নিয়ে অবাধে চলছে এমন ব্যবসা।

জলের এই অবৈধ ব্যবসা যাঁরা করছেন, সেই কারখানা মালিকদের কেউই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অন্য কোনও প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।

জলের বিশুদ্ধতা যাচাই না করে তা পানীয় জল হিসেবে বিক্রি যে ঘোরতর অন্যায়, সে কথা অবশ্য স্বীকার করছেন মালিকেরাও। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘সরকার যদি বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারত, তা হলে তো কেউ আমাদের জল কিনে খেত না। এত কারখানা চলতও না।’’

আর্সেনিকমুক্ত জল তৈরির সরকারি কলগুলি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে কেন? কেনই বা মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পাচ্ছেন না? জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘যে কলগুলি খারাপ হয়ে রয়েছে, সেগুলি ঠিক করতে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথায় কোথায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর করা হচ্ছে।’’ কী বলছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর?

তিন বছর ধরে কিছু স্কুল এবং বিভিন্ন রাস্তা সংলগ্ন আর্সেনিকমুক্ত জলের কল যে খারাপ হয়ে রয়েছে, তা স্বীকার করে ওই দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব সরকার বললেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত জলের কল সারাতে ইতিমধ্যেই নোটিস দেওয়া হয়েছে। কাজের বরাতও দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেই সব কল ঠিক করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে।’’ যদিও এলাকার মানুষের দাবি, এমন প্রতিশ্রুতির কথা বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mineral Water Contaminated Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy