এক মেয়েকে নিয়ে আরও এক মেয়ের অপেক্ষায় মা। —নিজস্ব চিত্র।
সদ্যোজাতকে অপহরণের ঘটনায় তোলপাড় হাড়োয়া। তাঁর আঠাশ দিনের মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মা মিতু বিশ্বাস ইতিমধ্যেই হাড়োয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। শনিবার রাত থেকে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। হাড়োয়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সর্দার বলেন, ‘‘সব রকম সম্ভাবনা মাথায় রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক আত্মীয়কে থানায় আনা হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আড়াই আগে হাড়োয়োর নিমতলা গ্রামের মিতুর সঙ্গে বিয়ে হয় পিয়ারা গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের। তিরিশ দিন আগে তাঁদের যমজ কন্যাসন্তান হয়। শিশুদের দেখাশোনার জন্য জামাইয়ের বাড়িতে ছিলেন মিতুর মা অনিমাদেবী। শুক্রবার শিশুরা ২৮ দিনে পা দিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী পুজো করে তাদের নামকরণ হবে। বিশ্বাস বাড়িতে চলছিল তারই তোড়জোড়। শনিবার রাত থেকে অবশ্য মায়ের কোলছাড়া এক মেয়ে। বাড়িতে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে মৃত্যুঞ্জয়বাবু স্থানীয় বাজারে মিষ্টির দোকান সামলাচ্ছিলেন। বাড়ির একটি ঘরে টিভি দেখছিলেন শিশু দু’টির দাদু সনৎবাবু। একটি ঘরে দুই মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন মিতু। রান্না ঘরে গল্প করছিলেন দুই বেয়ান অনিমা এবং কেয়াদেবী। রাত তখন পৌনে ৯টা হবে। মেয়েদের মশারির মধ্যে রেখে ঘর-সংলগ্ন বাথরুমে যান মিতু। সেখান থেকে একটু পরে ঘরে ঢুকে দেখেন মশারি এলোমেলো। ভিতরে এক মেয়ে নেই। কেঁদে ওঠেন তিনি। বাড়ির লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা জড়ো হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ পৌঁছয়। কিন্তু গোটা রাত মেলেনি মেয়ের সন্ধান। রবিবারেও একই পরিস্থিতি।
হাড়োয়া-দেগঙ্গা রাস্তার ধারের একটি বাড়িতে থাকে বিশ্বাস পরিবার। রাস্তার অন্য দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে খাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাতে সেখানে আলো নিয়ে খোঁজ করলেও কিছু মেলেনি। কিন্তু রবিবার সকালে খালের পাশ থেকে বাচ্চার একটি শুকনো কাপড় উদ্ধার হয়েছে। রাতভর বৃষ্টির পরে কী ভাবে সকালে বাচ্চার শুকনো কাপড় মিলল, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। এই ঘটনার সঙ্গে পরিবারের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
রবিবার মিতুদেবী বলেন, ‘‘সামান্য সময়ের জন্য বাথরুমে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, ঘরের দরজা ও বাইরের গ্রিলের গেট হাট করে খোলা। মশারি এলোমেলো। তার মধ্যে আমার এক মেয়ে নেই। কেউ ওকে অপহরণ করেছে।’’ ঠাকুমা কেয়াদেবীর কথায়, ‘‘দুই নাতনির ষষ্ঠীপুজোর জন্য গয়নাগাটি কেনা হয়ে গিয়েছে। আর এখন এই ঘটনা!’’ অন্য দিকে, সনৎবাবু বলেন, ‘‘যে ভাবে হোক, নাতনি যেন ফিরে আসে।’’
হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জু বিশ্বাস-সহ অনেকেই পুলিশের সঙ্গে মিলে রাতে শিশুটির খোঁজ করেছেন। অপহরণকারীদের কাছে সঞ্জুবাবুর আবেদন, ‘‘একটা দুধের শিশুকে নিয়ে এমন করা উচিত নয়। যে কোনও মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। শিশুটিকে যে-ই নিয়ে থাকুক, যেন ফিরিয়ে দেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy