বিদিশা বর। — নিজস্ব চিত্র।
বছর দু’য়েক আগে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছিলেন বিদিশা বর। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। কিন্তু তাঁদের পারিবারিক অবস্থা তাঁর সেই স্বপ্ন থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল। হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিদিশার বাবা মদন কলকাতায় রিকশা চালান। লকডাউনের সময়ে বাড়িতে বসে ছিলেন। আমপান ও ইয়াসের জোড়া ফলায় তাঁদের বাড়ি ডাঁসা নদীর জলে ডুবে গিয়েছিল। বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল বিদিশা ও তাঁর পরিবারকে। হাজারো প্রতিকূলতা টপকে পরীক্ষায় তাঁর সাফল্যের কাহিনি সে বছর প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদপত্রে।
বিদিশার সাফল্যের কথা জেনে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অনেক মানুষ। হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিন আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন। সন্দেশখালির একটি বেসরকারি সংগঠনের কর্তা শুভাশিস মণ্ডল বিভিন্ন খরচ জোগান দিতে শুরু করেন। স্মার্টফোন-সহ বিভিন্ন বইপত্র কেনা হয় আরও মানুষের সাহায্যে। সোনারপুরের বাসিন্দা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার উদয়শঙ্কর মাইতি বিদিশাকে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য দিতে শুরু করেন। সকলের সাহায্যে স্বরূপনগরে দিদির বাড়িতে থেকে এলাকার স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন বিদিশা। এ বছর তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৮২ শতাংশ নম্বর।
বিদিশা এ বছর ন্যাশনাল নিটে দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা মনের মতো হয়নি। আগামী বছর আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়ে ফের নিটে বসবেন বলে জানালেন। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে চান। বিদিশা জানান, তাঁর পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বই, কোচিং ক্লাস ও ইন্টারনেটের খরচের সাহায্য করছেন শুভাশিসবাবু। সেই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন অধ্যাপকও সম্প্রতি তাঁকে আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। বিদিশার মা প্রতিভা বলেন, “সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পরে যে সাহায্য এসেছে, তাতেই মেয়ে এখনও পড়াশোনা করতে পারছে। আমরা পারতাম না ওকে পড়াতে। সকলে এ ভাবে পাশে থাকলে আশা করি ওর স্বপ্ন সফল হবে।” শুভাশিস বলেন, “আমরা সংগঠনের তরফে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদাধিকারীদের থেকে সাহায্য এনে বিদিশাকে দিচ্ছি। ডাক্তারি পড়ার ক্ষেত্রে ওঁর কোনও অসুবিধা হবে না।”
শুভাশিস মণ্ডলের সাহায্যে ন্যাজাট থানার নিত্যবেড়িয়ার আর এক ছাত্রী মালতী পাত্রও বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে পারছেন। গ্রাম ছেড়ে বসিরহাটে থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। মালতী এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার র্যাঙ্ক আশানুরূপ হয়নি। আগামী বছর জয়েন্ট ও নিটে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। মালতী বলেন, “শুভাশিসবাবুর সাহায্যে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করেছি। ওঁরা আগামী দিনেও পাশে থাকবেন বলেছেন।”
হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা রুমানা খাতুন অর্থনৈতিক ও পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাধ্যমিকে ৬৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। তাঁর মা রেহানা বিবি বাপের বাড়িতে থেকে বিড়ি বেঁধে দুই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। সংসারে মাকে সাহায্য করতে রুমানা নিজের পড়ার পাশাপাশি ছোটদের পড়াতেন। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৭ শতাংশ নম্বর পান তিনি। কিন্তু মেয়েকে আর পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না রেহানার। সেই খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিভিন্ন মানুষের সাহায্য পান রুমানা। এখন তিনি হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সম্প্রতি প্রথম সিমেস্টারের ফলাফলের নিরিখে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে ক্লাসে প্রথম হয়েছেন। ব্যারাকপুরের বরাহনগর বিদ্যামন্দির বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সূর্যতপা চট্টোপাধ্যায় প্রতি মাসে রুমানার যাবতীয় খরচ বহন করছেন। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী কম খরচে রুমানাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কল্যাণীর এক শিক্ষিকা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন তাঁকে। রুমানা প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত হতে চান।
রেহানা বলেন, “সকলে সাহায্য করছেন বলে মেয়ে পড়তে পারছে। না হলে হয় তো পড়া বন্ধই হয়ে যেত। আশা করি, সকলের সাহায্যে মেয়ে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। সংসারের হাল ফিরবে।” সূর্যতপা বলেন, “রুমানা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমি ওর পাশে আছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy