অগত্যা: চলছে রেজিস্ট্রি বিয়ের কাজ। নিজস্ব চিত্র
সে অনেক কাল আগের কথা। মিঞা-বিবি রাজি ছিলেন আগেই। কাজির কাছে কলমা পড়ে নিকাহ হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের শংসাপত্র নেওয়ার কথা আর কে ভেবেছিল। ভাবতে হচ্ছে এখন। কারণ, শিয়রে এনআরসি-আতঙ্ক!
গত কয়েক দিন ধরে ভাঙড়ের নানা প্রান্তে কাজিদের কাছে বয়স্ক দম্পতিদের ভিড় চোখে পড়ছে। জানা গেল, নতুন করে কাগজেপত্রে সইসাবুদ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন অনেকে। বিয়ের রেজিস্ট্রি না থাকায় এনআরসি-র ফলে বৃদ্ধ বয়সে যদি আলাদা হতে হয়, সেই আতঙ্কই বাসা বেঁধেছে।
গত এক মাসে ভাঙড়ের এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে প্রায় ২০০ জন বৃদ্ধ দম্পতি রেজিস্ট্রি বিয়ে করে আবার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেল। শুধু বৃদ্ধ দম্পতিই নয়, বিভিন্ন বয়সের দম্পতিরা ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করে পাকাপোক্ত ভাবে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছেন।
ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল হক তরফদারের বয়স ষাটের কাছাকাছি। বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে সামাজিক ভাবে বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি করে বিয়ের তেমন চল ছিল না। এখন বলা হচ্ছে, বিয়ের শংসাপত্র না থাকলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বৈধতা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে এনআরসি চালু হলে স্বামী স্ত্রীকে আলাদা হয়ে যেতে হতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সে এসে আবার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে হল।’’
ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের বাসিন্দা জাহানারা খানম (বিবি) বলেন, ‘‘১৯৬০-৬২ সালে আমি তখন খুবই ছোট। খেলাধুলা করছিলাম। হঠাৎ বাড়ির বড়রা এসে বলল, তৈরি হয়ে নে, পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবে। আজই বিয়ে। দুই পরিবারের কয়েক জনের উপস্থিতিতে মাংস-ভাত রেঁধে রাতেই বিয়ে হয়ে গেল। সে সময়ে রেজিস্ট্রি বিয়ের চল ছিল না। বিয়ের এত বছর পরে জীবনের শেষ সময়ে এসে আবার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে বেশ ভালই লাগছে।’’ বৃদ্ধা জানান, ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতিরা বিয়ের সাক্ষী থাকল, পুরো পরিবারই খুশি।
ভাঙড়ের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আবু সাইদ বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কে বহু মানুষ আবার নতুন করে রেজিস্ট্রি করে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছেন। এঁদের অধিকাংশই বৃদ্ধ দম্পতি। গত এক মাসে আমি প্রায় দেড়শো জন বৃদ্ধ দম্পতির ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করেছি।’’
বিবাহ নথিভুক্ত করতে সরকার প্রচার চালায়। বিয়ের শংসাপত্র না থাকায় অনেক সরকারি কাজে সমস্যা হয়। এনআরসির গুঁতোয় মানুষ যে এ নিয়ে সচেতন হচ্ছেন, মন্দের মধ্যে এটুকু অনন্ত ভাল, বলছেন এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy