Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
সম্প্রতি নীতি আয়োগের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার অপুষ্টির শিকার। এখনও ৬১ শতাংশের বেশি পরিবার রান্নার গ্যাসের বদলে কাঠ বা কয়লা ব্যবহার করেন। ১০০টির মধ্যে ৪৭টি পরিবারের পাকা বাড়ি নেই। ৩২টি পরিবারের বাড়িতে নিজস্ব শৌচালয় নেই। এই সব মাপকাঠিতে বিচার করেই রাজ্যের ২১.৪ শতাংশ মানুষকে দরিদ্র বলে চিহ্নিত করেছে নীতি আয়োগ। রাজ্যের যে জেলাগুলিতে দারিদ্রের হার সব থেকে বেশি, তার মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পরিস্থিতি কী, সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার।
Malnutrition

Malnutrition: ভাতের পাতে শুধুই শাক

ব্লকের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির অন্যতম বেলুনি, কাঁটিবেড়িয়া ও রামভদ্রপুর। তিনটি গ্রাম মিলিয়ে জন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার।

n জোড়াতালি দিয়ে তৈরি কাঁচা বাড়িতই বসবাস। মন্দিরবাজারের গ্রামে।

n জোড়াতালি দিয়ে তৈরি কাঁচা বাড়িতই বসবাস। মন্দিরবাজারের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৮
Share: Save:

গ্রামে কাজের আকাল। অতিমারি পরিস্থিতিতে গ্রামের বাইরে গিয়ে কাজের সুযোগও কমেছে। ফলে রোজগার নেই অধিকাংশ পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে কার্যত আধ পেটা খেয়ে দিন কাটছে বহু মানুষের। অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধরা। এমনই পরিস্থিতি মন্দিরবাজার ব্লকের একাধিক গ্রামে।

ব্লকের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির অন্যতম বেলুনি, কাঁটিবেড়িয়া ও রামভদ্রপুর। তিনটি গ্রাম মিলিয়ে জন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। অধিকাংশ মানুষই চাষের জমিতে বা অন্যত্র দিন মজুরি করে সংসার চালান। গ্রামবাসীদের দাবি, ইয়াসের জেরে গ্রামের অধিকাংশ জমিতে চাষ হয়নি। ফলে গ্রামে কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। বাইরেও কাজ মিলছে না। দিনের পর দিন রোজগার না থাকায় ভাল করে খাবারটুকুও জুটছে না।

গ্রামবাসীদের অনেকেই জানান, রেশনের চাল মেলায় ভাতটুকু রাঁধতে পারছেন। কিন্তু সামান্য আনাজ কেনার সামর্থ্যও নেই। কোনওরকমে শাক সিদ্ধ দিয়েই ভাত খাচ্ছেন। তাও জোগাড় না হলে ভরসা ভাতের ফ্যান। শিশুর মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়ার সামর্থ্যও নেই অনেক পরিবারে। কেউ কেউ আবার নানা কারণে ঠিক মতো রেশন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। পড়শিদের কাছে চেয়ে-চিন্তে কোনওদিন আধ পেটা, কোনও দিন না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন।

শনিবার কাঁটিবেড়িয়া গ্রামে ঢোকার মুখে দেখা হল মাঝবয়সি সুচিত্রা ঘরামির সঙ্গে। মহিলা বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে রেশন পাচ্ছি না। খুব অনটনে পড়েছি। দু’বেলা খাবার জোটানো দায় হয়ে গিয়েছে। মাঝে মধ্যেই এক বেলা খেয়ে দিন কাটাই।” ওই গ্রামেরই বাসিন্দা পার্বতী সর্দার বলেন, “স্বামী অসুস্থ। কাজ করার সামর্থ্য নেই। খুবই কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছি। রেশনের চাল দিয়ে ভাতটুকু রাঁধতে পারলেও, আনাজ কেনার ক্ষমতা নেই। প্রায়ই শাক সিদ্ধ দিয়েই ভাত খেতে হয়।” বেলুনি গ্রামে স্ত্রী কন্যা নিয়ে বাস বছর ত্রিশের যুবক কমল সর্দারের। তিনি জানান, জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জব কার্ড থাকলেও বছর খানেক ধরে কোনও কাজ মিলছে না। ফলে রোজগার কার্যত শূন্য। কমল বলেন, “ধার-দেনা করেই চলতে হচ্ছে। স্ত্রীর বয়স ২৫ না পেরোনোয় লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকাও মিলছে না।”

শুধু দারিদ্রই নয়। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত এই গ্রামগুলি। অধিকাংশ বাড়িতেই নিজস্ব শৌচালয় নেই। গ্রামবাসীরা জানান, নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচালয় পেতে অগ্রিম টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই গ্রামের অনেকেরই। ফলে শৌচালয় মেলেনি। বনে-জঙ্গলে, রাস্তার ধারেই চলে শৌচকর্ম। তা থেকে বাড়ে রোগ বালাই। এলাকায় পানীয় জলেরও সঙ্কট রয়েছে। আবাস যোজনায় কিছু পাকা বাড়ি তৈরি হলেও, অনেক বাড়িই এখনও কাঁচা। গ্যাসের সংযোগ নেওয়ার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ পরিবারেরই। ফলে জ্বালানির জন্য ভরসা কাঠই।

গ্রামবাসীরা জানান, গ্রাম থেকে নাইয়ারাট গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে। ফলে অসুখ-বিসুখে সমস্যায় পড়তে হয়। সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়েও। এলাকা থেকে হাইস্কুলের দূরত্ব অনেকটা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বেশ কিছুটা দূরে। দূরত্বের কারণেই গ্রামের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে চায়না বলে দাবি গ্রামের অনেকেরই।

এ বিষয়ে মন্দিরবাজারে বিধায়ক জয়দেব হালদার বলেন, “কিছু পরিবার সমস্যার মধ্যে ছিল। তাঁদের পঞ্চায়েত থেকে সাহায্য করা হয়েছে। আর কারও কোনও সমস্যা হলে, সরাসরি আমার কাছে আসতে পারেন। আমি ব্যবস্থা নেব।” মন্দিরবাজারের বিডিও কৌশিক সমাদ্দার বলেন, “কাজের অভাব থাকার কথা নয়। কাজ না পেলে পঞ্চায়েতে যোগাযোগ করুক। তাতেও কাজ না হলে আমার কাছে আসুক।”

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition Mandirbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy