সুপ্রতিম সেন
আগুন থেকে মা-কে বাঁচাতে গিয়ে পুড়ে গিয়েছিল তার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ। তার সঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল যমজ দুই ভাইও। ঘটনার ১০ দিন পরে, মঙ্গলবার কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল ইছাপুরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুপ্রতিম সেনের (১৭)। দু’টি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। গত বুধবার একই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল তার ভাই সানক সেনের (১২)।
সুপ্রতিমের মা সুতপা সেন এবং তাঁর ছোট ছেলে শুভম বর্তমানে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-তে চিকিৎসাধীন। শুভমের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। দুই ছেলেকে হারিয়ে পরে কার্যত হতবাক সুতপা। দু’জনেরই অস্ত্রোপচার হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ভাল ফুটবল খেলোয়াড় সুপ্রতিম পাড়ার সকলেরই প্রিয় ছিল। এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান ইছাপুর আনন্দমঠের ‘বি’ ব্লক।
সুতপার দাদা পার্থপ্রতিম চৌধুরী জানান, বাড়িতে রান্নার গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কাজের জন্য সকলকেই সকালে বাড়ি থেকে বেরোতে হত। সেই জন্য স্টোভে ভাত চড়িয়ে ছিলেন সুতপা। ভাতের ফ্যান পড়ে আগুন ছড়িয়ে সুতপার শাড়ি জ্বলে যায়। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসে সুপ্রতিম।
মা-কে বাঁচাতে সে লাথি মেরে স্টোভটি ফেলতেই কেরোসিন ছড়িয়ে দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তার পুরো শরীরই জ্বলে যায় তাতে। তাঁকে বাঁচাতে আবার ছুটে আসে যমজ দুই ভাই সানক ও শুভম। তাদের পোশাকেও আগুন ধরে যায়। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে চারজনকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে তাঁদের পাঠানো হয় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বার্ন ইউনিটে।
সুপ্রতিম এবং সানকের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। গত বুধবার মৃত্যু হয় সানকের। চিকিৎসায় তেমন সাড়া না দিলেও লড়াই চলছিল সুপ্রতিমের। কিন্তু ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ মৃত্যু হয় তার।
বছর চারেক আগে সুপ্রতিমের বাবা বিকাশ সেনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে সুতপাই সংসার চালাতেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি। মাসকয়েক আগে তাঁর সেই চাকরিটি যায়। তার পর থেকে সুতপার দুই দাদা তাঁদের সাহায্য করতেন। সুতপার দাদা পার্থপ্রতিমবাবু জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর বোনের একটি চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। সুপ্রতিম আইএসএল-এর জুনিয়র ডিভিশনের একটি দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই তার পুনে যাওয়ার কথা ছিল। সেদিন সেই কাজেই তার কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল। সানক ও শুভম নার্সারি লিগে খেলত। সেদিন তাদেরও খেলা ছিল কলকাতায়। সকলেরই বেরোনোর কথা ছিল বলে খুব সকালেই রান্না বসিয়েছিলেন সুতপা। তার পরেই এই দুর্ঘটনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বারবার ছেলেদের খোঁজ করছিলেন সুতপা। সানকের মৃত্যুর খবর তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ঘটনার দু’দিন পরে। সুপ্রতিমের অবস্থা যে ভাল নয়, তা জানতেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের লোকেদের অবস্থা দেখেই তিনি বুঝে যান বড় ছেলে সুপ্রতিম আর নেই। শেষ পর্যন্ত তাঁকে খবর দেওয়া হয়। তার পর থেকে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy