বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান কর্মসূচিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
ঠিক সময়েই দলে সাংগঠনিক রদবদল হবে বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি ‘সেবাশ্রয়’-এর উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক ফের দলে সাংগঠনিক রদবদলের বিষয়ে মুখ খোলেন। তা ছাড়াও আরজি কর, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
সাংগঠনিক রদবদল
অভিষেক বলেন, “সাংগঠনিক রদবদল হবেই। যাঁরা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাঁদের চিন্তা করতে হবে না। গাছের পরিচয় তার ফলে। আমি কত দক্ষ, কত অভিজ্ঞ, তা তো ফলাফল দেখলেই বোঝা যাবে।” ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ জানান, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি ইতিমধ্যেই রদবদলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন। এই বিষয়ে দলনেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। অভিষেক বলেন, “পর পর ভোট এবং উৎসব ছিল। ঠিক সময়েই হবে (সাংগঠনিক রদবদল)।” প্রসঙ্গত, মমতার উপস্থিতিতেই ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছিলেন, লোকসভায় যেখানে যেখানে দলের খারাপ ফল হয়েছে, সেই সমস্ত পুর এলাকায় প্রশাসনিক স্তরে ‘রদবদল’ হবে। সেই সূত্রে কমবেশি ৭০টি পুরসভা ও পুরনিগমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রদবদলের প্রস্তাব মমতার কাছে অভিষেক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অক্টোবরে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার আগেই। তবে নিজের জন্মদিনে গত ৭ নভেম্বর অভিষেক একান্ত আলোচনায় এ-ও জানিয়েছিলেন, সেই রদবদল থেকে আপাতত বাদ থাকছে কলকাতা। অভিষেক এ-ও বলেছিলেন, রদবদলের নিরিখ হবে লোকসভা ভোটের ফল। ফের তিনি সেটাই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে রদবদল হবে। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। নভেম্বরে অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য ছিল, ছ’টি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে রদবদল সংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু তা-ও হয়নি। এর মধ্যে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সমীকরণ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে তৃণমূলে। তার মধ্যেই অভিষেক জানিয়ে দিলেন, রদবদল হবেই। তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, রদবদল সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ চলছে, যা নিজে তত্ত্বাবধান করছেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও কথা বলছেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কবে রদবদল সংক্রান্ত ঘোষণা হবে,তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দলে বিভাজন নয় ঐক্য
লোকসভা ভোট-পরবর্তী পর্যায়ে নানা ঘটনায় তৃণমূলের মধ্যে নেতৃত্বের সমীকরণের প্রশ্নে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি মুখপাত্র তালিকা প্রকাশের পর যা আরও প্রকট হয়েছিল। দলের মধ্যে যাঁরা ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত, তাঁদের বাদ পড়া নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল শাসকদলের অন্দরে। যদিও অভিষেক, সেই সব জল্পনায় জল ঢালতে চেয়েছেন বৃহস্পতিবার। তাঁর কথায়, “আমার কাজ দলে দলে ঢুকে জোড়াফুল ফোটানো। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী আমার কাছে এলে খবর হয়!” ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের সংযোজন, “আমি পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আমার সঙ্গে রাজ্য সভাপতি বৈঠক করতে পারেন কি পারেন না? আমরা তো সহকর্মী, সহযোদ্ধা।”
আরজি কর
অভিষেকের প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে আসে আরজি কর প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা বলেছিলেন আরজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রান্ত করেছেন। আর আজ দেখুন। এই প্রসঙ্গ তারা তুলছেন না।” আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের দিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “অভিযুক্তকে ধরেছিল কলকাতা পুলিশই।” অভিষেকের বক্তব্যে আরও এক বার আসে আরজি কর হাসপাতালের কথা। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের ৩০০টি স্বাস্থ্যশিবিরে যাওয়া রোগীদের কাউকে কাউকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হবে। অভিষেক জানান, ‘রেফারেল সিস্টেম’-এর মাধ্যমে মোট ১২টি হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হবে। এই ১২ হাসপাতালের তালিকায় এসএসকেএম, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যালের মতো হাসপাতালের সঙ্গে রয়েছে আরজি কর হাসপাতালও।
বিজেপিকে তোপ
মণিপুর, বাংলাদেশ, আবাস যোজনা-সহ একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন অভিষেক। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুপ কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। বলেন, “রাজ্যকে অশান্ত করতে জঙ্গি ঢোকাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের ধরছে রাজ্য পুলিশ।” আবাস নিয়ে মোদী সরকারকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ প্রকল্পের টাকা আমাদের দেয়নি। প্রমাণ করতে পারলে আমি ক্ষমা চাইব।”
অভিষেক জানান, আগামী ৭৫ দিন ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় সেবাশ্রয় কর্মসূচি চলবে। ৬-৭টি বুথপিছু একটি করে স্বাস্থ্যশিবির থাকছে বলে জানান তিনি। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “ভারতে এর আগে এই কাজ করার সাহস কেউ দেখায়নি।” অন্য জনপ্রতিনিধিদেরও এই কাজে এগিয়ে আসার আর্জি জানান অভিষেক। বলেন, এ ক্ষেত্রে তিনি বাকিদেরও যথাসাধ্য সাহায্য করতে রাজি।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর আমতলায় একটি চিকিৎসক সম্মেলনে (ডক্টর্স সামিট) যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক। সেই সময়েই আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছিল যে, ডায়মন্ড হারবারের সাতটি বিধানসভা এলাকায় গোটা জানুয়ারি মাস জুড়ে স্বাস্থ্যশিবির হবে। প্রতিটি বিধানসভায় ১০ দিন করে স্বাস্থ্যশিবির করার পরিকল্পনা হয়েছে। আর সেই কারণেই বিশেষ এই সম্মেলন। সেই সময় অভিষেকের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়াকে চিকিৎসকদের সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেতুবন্ধনের’ প্রয়াস বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন কেউ কেউ। কারণ তার আগের দু’টি মাসে আরজি করের ঘটনা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy