প্রশ্ন উঠছে নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম উঠে আসা শ্বেতার সঙ্গে হঠাৎ কেন কথা বললেন মদন? ফাইল চিত্র ।
পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। মাথায় ঝলমলে টুপি, গলায় গোলাপের মালা, চোখে রোদচশমা। শুক্রবার বিকেলে এই বেশেই কামারহাটি পুরসভায় প্রবেশ করছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। সঙ্গে ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। হঠাৎ তাঁর নজর পড়ল পুরসভার একটি কোনে বসে থাকা এক মহিলা কর্মীর দিকে। কারণ গত এক সপ্তাহে সেই কর্মীর ছবি রাজ্যের প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশ্যে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে ধৃত ব্যবসায়ী অয়ন শীলের ‘বিশেষ’ পরিচিত বলে উঠে এসেছে তাঁর নাম। অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে তাঁর নামে থাকা একাধিক নথি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারী অধিকারীকরা। তিনি শ্বেতা চক্রবর্তী। তিন দিন বিনা নোটিসে ছুটি নিয়ে তিনি শুক্রবারই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। পুরসভায় গিয়ে শ্বেতার দিকে নজর পড়তেই তাঁর দিকে এগিয়ে যান কামারহাটির বিধায়ক। দু’জনের মধ্যে বাক্যালাপও হয়। আর সেই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের জেরেই জোর তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম উঠে আসা শ্বেতার সঙ্গে হঠাৎ কেন কথা বললেন মদন? কী কথাই বা হল তাঁদের মধ্যে।
মদন বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতিতে কামারহাটি পুরসভার নাম উঠে এসেছে। কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক জন বিধায়ক হিসাবে আমার কর্তব্য তাঁদের আশ্বস্ত করা। আর সেই কারণেই আমি পুরসভায় এসেছি। এখানে এসেই শ্বেতার সঙ্গে দেখা হয়। গত কয়েক দিনে আমি ওঁর ছবি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। শুনেছিলাম এখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করেন। তাই শুধু গিয়ে জিজ্ঞাসা করি ওঁর নামই শ্বেতা কি না এবং কোথায় থাকে। এটুকু বলেই আমি বেরিয়ে আসি।’’
শ্বেতাও অবশ্য মদনের কথাতেই সায় দিয়েছেন। তিনিও বলেন, ‘‘উনি আমার নাম এবং বাড়ি কোথায় তা জিজ্ঞাসা করেন। কেন পুরসভায় এসেছিলেন বলতে পারব না। উনি এখানকার বিধায়ক। তাই এখানে আসতেই পারেন।’’
এর আগেও নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নাম উঠে আসা গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘নাম’ জড়িয়েছিল মদনের। মদন এবং হৈমন্তীর একসঙ্গে ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায়। জল্পনা তৈরি হয়, কী ভাবে যোগ রয়েছে মদন-হৈমন্তীর। মদন অবশ্য তখন দাবি করেছিলেন, তাঁর নিজস্ব জনপ্রিয়তার কারণে মহিলারা তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে পছন্দ করেন। এ-ও দাবি করেছিলেন, ‘‘অনেকে আমার সঙ্গে ছবি তুলে বাঁধিয়ে রেখে দেয়। লোকে যেমন রবীন্দ্রনাথের ছবি বাঁধিয়ে রাখে, তেমনই আমার ছবিও বাঁধিয়ে রাখলে অসুবিধা কোথায়?’’ এত জন তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলেন যে মনে রাখা সম্ভব নয়। সেই ভাবেই কখনও হৈমন্তী হয়তো তাঁর সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন কামারহাটির বিধায়ক। তবে শ্বেতার ক্ষেত্রেও কি এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? তাঁর সঙ্গে কি শ্বেতার ছবি প্রকাশ্যে এনে কোনও রসায়ন তৈরির চেষ্টা হতে পারে?
উত্তরে মদন বলেন, ‘‘শ্বেতার সঙ্গে আমার ছবি দেখিয়ে কেউ বলতেই পারেন আমার সঙ্গে শ্বেতার প্রচণ্ড ঘনিষ্ঠতা। হৈমন্তীর সঙ্গে যে ভাবে ছবি প্রকাশ্যে এনে নাম জড়ানো হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে। এত জন ছবি তোলেন যে মনে রাখা সম্ভব নয়। অয়ন শুনেছি চুঁচুড়ার বাসিন্দা। আমি বহু বার গিয়েছি। এখন যদি অয়ন বা ওঁর কোনও সহযোগী আমার সঙ্গে ছবি তুলে থাকে তা হলে কি আমি তাঁদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি! হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন আমার সঙ্গে চম্বলের ডাকাতের দেখা হয়েছিল। আমাদের একসঙ্গে ছবিও রয়েছে। তা বলে কি আমি চম্বলের ডাকাত হয়ে গেলাম!’’
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বহু নথি উদ্ধার করেছে ইডি। যার মধ্যে রয়েছে পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত ওএমআর শিটও। তাতে উঠে এসেছে কামারহাটি পুরসভার নাম। যার পর থেকে কামারহাটির কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও মদনের দাবি, ‘‘এর আগে ১২৫ বছরে কোনও দিন কামারহাটি পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতা আনতে পরীক্ষা করে নিয়োগ করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিয়োগ আমরা করিনি। নিয়োগ স্বচ্ছ ভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে হয়েছে। আমাদের পক্ষে সরাসরি দুর্নীতি করা সম্ভবও নয়। কী ভাবে পরীক্ষা হয়েছে, কী প্রশ্ন করা হয়েছে, কী উত্তর দিয়েছে পরীক্ষার্থীরা এর আমরা কিছুই জানি না। নির্দিষ্ট সংস্থা পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যদের তালিকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। তেমনই কোনও লিস্টে হয়তো শ্বেতারও নাম ছিল। এমনিতে কামারহাটি পুরসভার নাম রয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিয়োগে কোনও অনিয়ম ধরা পড়েনি।’’
পাশাপাশি নিয়োগে অনিয়মের জন্য ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরি নিয়ে যদি দুর্নীতি হয়, তা হয়েছে সিপিএমের আমলে। চিরকুটে লিখে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তখনকার কোনও প্রমাণ নেই। সব মাটি চাপা পড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি যে অয়নকে নিয়ে এত প্রশ্ন তাঁকে এনেছিল সিপিএম। ওরাই বলতে পারবে কী দুর্নীতি হয়েছে। প্রথম চিটফান্ড এনেছে সিপিএম। যত পাপ করেছে সিপিএম। কিন্তু পাপের গন্ধ আমাদের গায়ে লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy