ফাইল চিত্র
আয়লা হোক বা আমপান—দুর্যোগের দিনে সবার সামনে দাঁড়িয়ে দুর্গতদের সাহায্যে নেমেছিলেন তিনি। এ বার সুন্দরবনে করোনা-মোকাবিলায় তৈরি করলেন পঞ্চাশ জনের ‘বাহিনী’। যাকে ‘কান্তিবুড়োর বাহিনী’ বলে ডাকা শুরু করেছেন অনেকে। ‘কান্তিবুড়ো’ হলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সুন্দরবনের সঙ্গে যাঁর ‘নাড়ির যোগ’ দীর্ঘদিনের।
শহরের গণ্ডি ডিঙিয়ে গ্রামে থাবা বসাচ্ছে করোনা। পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, মথুরাপুর, কুলতলির মতো সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাও ঢুকে পড়েছে করোনা মানচিত্রে। সুন্দরবনের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা মহামারী নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ। এই অবস্থায় সাগর লাগোয়া ব-দ্বীপের দুর্গম এলাকায় করোনা-মোকাবিলায় কান্তিবাবু তৈরি করেছেন ৫০ সদস্যের ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বাহিনী’।
‘কান্তিবুড়োর’ বাহিনীতে রয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী এবং হাতুড়ে চিকিৎসক। বাহিনীর কাজকর্ম দেখভাল করবেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সদস্যেরা। তাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলা প্রশাসন। সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে।
কান্তিবাবুর বক্তব্য, ‘‘সকলেই শহরাঞ্চল নিয়ে চিন্তা করেন। এখন করোনা গ্রামে ছড়াচ্ছে। কোথায় যাবেন গ্রামের রোগীরা? আমাদের বাহিনীর সদস্যেরা করোনা-আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন। কোনও এলাকায় করোনা ছড়ালে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করবেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য গ্রামীণ চিকিৎসকদের (হাতুড়ে) উপরে নির্ভরশীল। করোনা-মোকাবিলায় ওঁদের যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম সরকারের কাছে। সরকার কী ভাবছে জানি না। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।’’
আগামী ৯ অগস্ট বাহিনীর সদস্য গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে কলকাতা থেকে রায়দিঘি যাবেন চিকিৎসকদের একটি দল। কান্তিবাবু জানান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রামীণ চিকিৎসকেরাই নিভৃতবাসে থাকা উপসর্গ-বিহীন এবং সামান্য উপসর্গ রয়েছে এমন করোনা-রোগীদের চিকিৎসা করবেন। পিপিই দেওয়া, এলাকা জীবাণুমুক্ত করা, মাস্ক দেওয়া এবং সচেতনতা প্রচারের মতো কাজগুলি করবেন বাহিনীর অন্য সদস্যেরা।
এই উদ্যোগ সরকারকে করোনা-মোকাবিলায় সাহায্য করবে বলে মনে করছেন কান্তিবাবু। সরকারের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘গোটা রাজ্যেই এই মডেল অনুসরণ করুক সরকার। তাতে করোনা নিয়ন্ত্রণের কাজে দ্রুত সাফল্য আসবে। এই মডেল অনুসরণ করেই করোনা-যুদ্ধে সফল হয়েছে চিন।’’
কান্তিবাবু বলেন, ‘‘কলকাতা তো দূরের কথা, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের পক্ষে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে যাওয়াই অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই ওই এলাকার করোনা-রোগীরা যাতে ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা পান, তার চেষ্টা চলছে। গ্রামীণ চিকিৎসকেরা প্রয়োজনে রোগীদের স্যালাইন ও অক্সিজেন দিতে পারবেন।’’
ঘরে চিকিৎসা করে করোনা-আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পারলে শহরাঞ্চলের হাসপাতালগুলির উপরে চাপ তৈরি হবে না বলে অভিমত প্রবীণ ওই সিপিএম নেতার। কান্তিবাবুর দাবি, রায়দিঘিতে করোনা-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। কুলতলি, পাথরপ্রতিমা এবং মথুরাপুর-১ এবং ২ ব্লকেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
কান্তিবাবুর উদ্যোগের প্রশংসা করলেও সংক্রমণ নিয়ে তাঁর দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেননি ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায়। তাঁর দাবি, ‘‘জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা যখন ফিরছিলেন, তখন পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি তার থেকে ভাল।’’ করোনা-নিয়ন্ত্রণে বাহিনী গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এই সময়ে এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মানুষের পাশে থাকার জন্য যে উদ্যোগই নেওয়া হবে, তাকে স্বাগত জানাব। প্রশাসনের সাহায্য চাইলে যতটা সম্ভব তা দেওয়ার চেষ্টা হবে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy