Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ওসির সঙ্গে চায়ের আসরে ভুয়ো আইপিএস

আশপাশের এলাকায় দিন দিন নাম ফাটছিল যুবকের। আইপিএস অফিসার বলে কথা! ঠাটবাটে লোকের সমীহ আদায় করে নিতে কসুর করেনি। কিন্তু সাহস বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, থানায় ঢুকে ওসির ঘরে বসে পায়ের উপর পা তুলে চা খাওয়ার সাধ হয়েছিল। শেষমেশ কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরে ফেলেন পুলিশকর্তারা। প্রতারণার অভিযোগে রবিবার ক্যানিং থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ভুয়ো আইপিএস অফিসারটিকে।

 তখন কাকুতি-মিনতির পালা। — ছবি: সামসুল হুদা।

তখন কাকুতি-মিনতির পালা। — ছবি: সামসুল হুদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

আশপাশের এলাকায় দিন দিন নাম ফাটছিল যুবকের। আইপিএস অফিসার বলে কথা! ঠাটবাটে লোকের সমীহ আদায় করে নিতে কসুর করেনি। কিন্তু সাহস বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, থানায় ঢুকে ওসির ঘরে বসে পায়ের উপর পা তুলে চা খাওয়ার সাধ হয়েছিল। শেষমেশ কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরে ফেলেন পুলিশকর্তারা। প্রতারণার অভিযোগে রবিবার ক্যানিং থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ভুয়ো আইপিএস অফিসারটিকে।

অবিনাশ ভুঁইঞা নামে বছর আঠাশের যুবকটির বাড়ি খানাকুলে। মাসখানেক ধরে অনুপকুমার ভুঁইঞার ছেলে অবিনাশ ক্যানিঙের গার্লস স্কুলপাড়ায় শিশিরকান্তি দাসের বাড়িতে ভাড়া থাকছিল। কথায় কথায় শিশিরবাবু গদগদ ভাবে ক্যানিং থানার এক কনস্টেবলের কাছে গল্প করেছিলেন, পুলিশের এক বড়কর্তা ভাড়া থাকেন তাঁর বাড়িতে। ঘরের বাইরে তামার ফলকে আইপিএস অফিসারের নাম যেন বাড়ির ইজ্জতই বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েক গুণ! খানিকটা কৌতুহল, খানিকটা ভক্তিভরে কনস্টেবলটি দেখা করেন সেই ‘অফিসার’-এর সঙ্গে। তিনিই এসআই লিটন হালদার ও এএসআই দীপক রায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন অবিনাশের। তাঁরাও সসম্মানে ‘স্যার-ট্যার’ বলে একসা!

কথাটা ওঠে ওসি সতীনাথ চট্টরাজের কানে। আলাপ করতে আগ্রহী হন তিনিও। লোক মারফত সে প্রস্তাব ফেরায়নি আত্মবিশ্বাসী যুবক অবিনাশ। ওসির সঙ্গে আলাপ করতে এ দিন দীপকবাবুর সঙ্গে সে পৌঁছে যায় থানায়। শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাস চূড়ান্ত। থানার কর্মীদের মধ্যে ঠকাস ঠকাস করে স্যালুট ঠোকার ধুম পড়ে যায় তাঁকে দেখে। শীতের দুপুরে চায়ের চুমুকের সঙ্গে ধূমায়িত হয় আলাপচারিতা। সতীনাথবাবুকে অবিনাশ জানায়, তার বাবা মেডিক্যাল অফিসার। উলুবেড়িয়ায় কর্মরত। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পরীক্ষা দিয়ে আইপিএসে চান্স পেয়েছে সে। ট্রেনিং হয়েছে হায়দারাবাদ থেকে। কিন্তু চাকরির খুঁটিনাটি নিয়ে সতীনাথবাবুর প্রশ্নের সামনে ক্রমশ অস্বস্তিতে প়ড়তে দেখা যায় অবিনাশকে।

‘স্যার একটু বসুন, আমি একটু আসছি’— এই বলে ওসি ঘরের বাইরে এসে বহু দ্বিধায় ফিসফিসিয়ে ফোন করেন এসডিপিও সৌম্য রায়কে। আইপিএস সৌম্যবাবুর কাছে সবিনয়ে জানতে চান, ক্যানিঙে কোনও আইপিএস এসে থাকছেন, এমন খবর তাঁর কাছে আছে কিনা। সৌম্যবাবু কৌতুহলী হয়ে টেলিফোনেই কথা বলেন অবিনাশের সঙ্গে। জানতে চান, অবিনাশের ইউপিএসসি নম্বর, কোন ব্যাচ, কোথায় কত দিনের ট্রেনিং হয়েছে, এমন নানা বশদ তথ্য। টেলিফোনের ও প্রান্তে এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে ক্রমশ শিথিল হতে থাকে অবিনাশের স্মার্টনেস। ‘কেসটা ভাল করে খতিয়ে দেখুন’— ওসিকে এই নির্দেশ দেন এসডিপিও।

উপরতলার এই বার্তা বলীয়ান হয়ে সতীনাথবাবুর উর্দির তলা থেকে এ বার বেরিয়ে পড়ে ‘পুলিশি সত্ত্বা’। ভেঙে পড়ে অবিনাশও। জানায়, আদতে মাধ্যমিক পাস সে। তবে তার দাবি, আইপিএসের ট্রেনিং নেওয়ার কথাই শুধু বলেছিল। অফিসার পরিচয় দেয়নি কারও কাছে। তার বাড়িতে ফোন করে জানা যায়, বাবা হাতুড়ে চিকিৎসক। পরে পুলিশ ভাড়া বাড়ি থেকে নামফলক, আইপিএস পরিচয় লেখা রবার স্ট্যাম্প, পুলিশের পোশাক উদ্ধার করেছে। ঠিক কী উদ্দেশ্যে অবিনাশ এমন ভেক ধরেছিল, কেনই বা এসেছিল ক্যানিঙে— সে সব জানতে ওই যুবককে জেরা করছে পুলিশ। ওসির হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে, কান্নাকাটি করেও রেহাই মেলেনি। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনও অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে থানা সূত্রের খবর। আর কী বলছেন সতীনাথবাবু?

তাঁর কথায়, ‘‘এত বছরের পুলিশের নজরটাও প্রথমে ধোঁকা খেয়ে গিয়েছিল। ছোকরার এলেম আছে বলতে হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE