রাজা বেপাত্তা। তাঁর ছেড়ে যাওয়া রাজ্যপাটের দখল নিয়ে শুরু হয়েছে কামড়া-কামড়ি।
স্থানীয় মানুষজন ভেবেছিলেন, হালিশহরের উপ পুরপ্রধান রাজার দাপট অস্ত গেলে বুঝি এলাকায় শান্তি ফিরবে। বেআইনি কাজ-কারবারে ভাটা পড়বে। কিন্তু কোথায় কী! রাজা না থাকলেও তাঁর রাজ্যপাটের বখরা নিয়ে চলছে আকচা-আকচি। রাজা ছিলেন তৃণমূল নেতা। এখন যে লড়াই চলছে, অন্তরালে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর তাতে মদত আছে বলে অভিযোগ উঠছে নানা দিক থেকে। সব মিলিয়ে অবৈধ বালি খাদানের ব্যবসা, জমিজমার দখল, পুকুর ভরাট করে বহুতল তৈরি-সহ নানা অসাধু ব্যবসা যেমন চলছিল, তেমনই চলছে। শুধু ভাগাভাগির অঙ্কটা বদলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ। অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও।
হালিশহরের উপ পুরপ্রধান দেবাশিস দত্ত ওরফ রাজা মাস দেড়েক ধরে বেপাত্তা। তাঁর দল, তৃণমূলের নেতারাই জানাচ্ছেন, জনরোষে শহর ছেড়েছেন এক সময়ে দাপুটে নেতা রাজা। কিন্তু শহরের এখানে-ওখানে বেআইনি মদের ঠেক, অনলাইন লটারির কারবার চলছেই। বরং কিছু কিছু নতুন ঠেকও গজিয়ে উঠেছে। আর সে সব দখলে রাখতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধছে। ঘাম ঝরছে পুলিশের। পুলিশ কর্তাদের অবশ্য দাবি, এলাকায় মদের ভাটি নেই। আর তৃণমূল নেতারা বলছেন, বেআইনি কারবারের সঙ্গে তাঁদের কেউ জড়িত নয়। দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের কথাও মানতে চাননি তাঁরা।
রাজা উধাও হওয়ার আগে থেকেই দলে তাঁর ক্ষমতা খর্ব হয়েছিল। শহর যুব তৃণমূলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাজাকে। পুরসভাতেও তাঁর কর্তৃত্ব কমেছিল। দলের এক নেতা জানিয়েছেন, এর পিছনে দলেরই কিছু নেতার ভূমিকা ছিল। রাজার ক্ষমতা খর্ব হওয়ার পর থেকেই শহরের দুই নেতা নানা অসামাজিক কাজে মদত দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ দলের অন্দরেই।
দিন সাতেক আগের ঘটনা। মনসা পাড়ায় মদের ঠেক বন্ধ করতে গিয়েছিলেন শহরের যুব তৃণমূল নেতা প্রবীর সরকার, মাধব চক্রবর্তীরা। মদের ঠেক এবং অনলাইন লটারির কারবার চলছিল বলে অভিযোগ। তাঁদের উপস্থিতিতেই মদের ঠেক এবং লটারির কাউন্টারে ভাঙচুর চলে। প্রতিবাদে প্রবীরবাবুদের ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে কিছু লোক। অভিযোগ, শহরের অন্য প্রান্তে মদের ঠেক এবং অনলাইন লটারি অবাধে চলছে। ওই ঠেকগুলি রাজারই এক শাগরেদ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রবীর বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে একজন তৃণমূল যোগ দিয়েছে। তার মদতেই এ সব কারবার চলছে। আগে তাঁকে আমাদের বিধায়কের সঙ্গে দেখা যেত।’’
কাঁচরাপাড়ার বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। কারণ, কোনও সমাজবিরোধীর সঙ্গে আমার বা দলের কোনও যোগ নেই।’’
শহরের তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, বাবা মুকুল রায় দলবদলের পরে ছেলে শুভ্রাংশুর হাত থেকে হালিশহরের রাশ আলগা হচ্ছে। সেই শূন্যস্থান দখল নিতেই উঠেপড়ে লেগেছে কেউ কেউ।
আর তাতেই ফের উত্তপ্ত হচ্ছে শহর। রাজার রাজ্যপাটের মধুভাণ্ড যে এখনও শুকিয়ে আসেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy