Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Drug

মাদক কারবারে ‘রমরমা’, মানছেন তৃণমূল বিধায়কও

মাঝে মধ্যে দু’একজন ছোটখাট কারবারি পুলিশ কিংবা সিআইডির জালে পড়লেও মাদক-চক্রের মাথারা পর্দার অন্তরালেই থেকে যায় বলে অভিযোগ

পথে: ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে কাশীপুর থানার উদ্যোগে মাদক বিরোধী মিছিল।

পথে: ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে কাশীপুর থানার উদ্যোগে মাদক বিরোধী মিছিল। ছবি: সামসুল হুদা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০৬:২৮
Share: Save:

মাদক কারবার এখন আর শুধু ঘুরিয়ারিশরিফে কেন্দ্রীভূত নয়। ছড়িয়েছে দুই ২৪ পরগনার অন্য প্রান্তেও। পুলিশের একাংশের দাবি, টানা অভিযানের জেরে মাদক কারবারিদের একাংশ ঘুটিয়ারিশরিফ ছেড়ে সক্রিয় হয়েছে অন্য এলাকায়। সেই রমরমা এখন নেই। তবে খুচরো কারবার চলছে বলে মানছেন পুলিশ, শাসক দলের নেতারাও।

মাঝে মধ্যে দু’একজন ছোটখাট কারবারি পুলিশ কিংবা সিআইডির জালে পড়লেও মাদক-চক্রের মাথারা পর্দার অন্তরালেই থেকে যায় বলে অভিযোগ। ফলে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ঘটা করে ‘বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস’ পালন করা হলেও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই ‘লোক দেখানো’ কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ অনেকেরই।

পুলিশ সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের লালগোলা ও পলাশি থেকে ঘুটিয়ারিশরিফে হেরোইন আনা হয়। কখনও তা আসে রেলপথে। কখনও ইট-বালি বা স্টোন চিপের গাড়িতে। ঘুটিয়ারিশরিফ থেকে মাদকের ছোট পুরিয়া ছড়িয়ে পড়ে ক্যানিংয়ের তালদি, বেতবেড়িয়া, গড়িয়া-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। মাদক কারবারের তদন্তে নেমে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘুটিয়ারিশরিফে সক্রিয় মাদক চক্রের মূল পান্ডা সফিক লস্কর ওরফে পিন্টু। তার পরিবারের আরও কেউ কেউ এই কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ। পিন্টুর এক আত্মীয় এলাকায় তৃণমূল নেত্রী হিসেবে পরিচিত। গত বছরের শেষ দিকে পিন্টুর বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তার নাগাল পায়নি পুলিশ।

ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা শাসক দলের যুব সংগঠনের জেলা সভাপতি শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘ঘুটিয়ারিশরিফের হেরোইন ব্যবসা বন্ধ করতে লাগাতার আন্দোলন করছি। আমাদের চাপে পুলিশ পিন্টুর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল। সে সময়ে কিছুদিন হেরোইনের ব্যবসা বন্ধ ছিল। ফের রমরমিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে। এর ফলে যুব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’

পিন্টুর ওই আত্মীয়ার সঙ্গে দলের যোগ নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে শওকতের বক্তব্য, ‘‘যারা এ ধরনের কারবার করে, তারা আমাদের দলের কেউ নয়। আমরা কোনও মাদক কারবারিকে সমর্থন করি না। পুলিশকে বলব, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, পিন্টু ও তার পরিবারের কেউ কেউ হেরোইনের ছোট পুরিয়া বাইরে পাচার করে। এই চক্রে অনেক মহিলাও রয়েছে। বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগে বই-খাতার মধ্যে লুকিয়ে আনা হয় হেরোইন। পিন্টুর ট্রাক রয়েছে। সেই ট্রাকে ইমারতি দ্রব্যের সঙ্গে হেরোইন পাচার হয় বলে
তদন্তকারীরা জেনেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে পিন্টুর ছেলে রশিদ ওরফে বাচ্চু হেরোইন-সহ ধরা পড়ে সোনারপুরে। সঙ্গে ধরা পড়ে জামালউদ্দিন শেখ নামে আর এক মাদক কারবারি। নদিয়ার কালিয়াগঞ্জ থেকে আনা প্রায় কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার হয়েছিল তাদের থেকে। গত ছ’মাসে শিউলি বিবি নামে এক মাদক পাচারকারী-সহ মাদক-চক্রের পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘ঘুটিয়ারিশরিফে হেরোইনের ব্যবসার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি। অনেককেই গ্রেফতার করেছি। কাউকে ছাড়া হবে না।’’ গোয়েন্দাদের আর এক অংশ অবশ্য দাবি করছেন, এখন ঘুটিয়ারিশরিফ থেকে ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে বহু কারবারি। মাস তিনেক আগে প্রায় ৪০০ গ্রাম হেরোইন ও নগদ ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা-সহ তিন মাদক কারবারি বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের হাতে ধরা পড়ে।

সম্প্রতি ক্যানিং থানার পুলিশ দুই মহিলা-সহ তিন জনকে তালদির বয়ারসিং গ্রাম থেকে ১৪২ গ্রাম হেরোইন ও নগদ প্রায় ৭ লক্ষ টাকা-সহ গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম আক্রম আলি মোল্লা, তার স্ত্রী মিনা বিবি ও ভাগ্নি কুলসুম বিবি। পুলিশের দাবি, আক্রমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কুলসুমের ঘর থেকে হেরোইনের প্রচুর ছোট পুরিয়া উদ্ধার হয়। বালিশের মধ্যে, চালের ড্রাম ও বিছানার তলা থেকে উদ্ধার হয় টাকা। পুলিশের দাবি, স্ত্রী ও ভাগ্নির মাধ্যমে হেরোইন পাচার করত আক্রম। সূত্রের খবর, বেশি পরিমাণ হেরোইন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়। অতীতে বনগাঁর জামতলায় রমরমা কারবার হত হেরোইনের। ইদানীং সীমান্তে কড়াকড়ি হওয়ায় দুই খুচরো কারবার বেড়েছে বলে অভিযোগ।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Drug
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy