Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
তিন মাস ধরে খাবার দেওয়া বন্ধ অঙ্গনওয়াড়িতে
Mid Day Meal

কবে মিলবে চাল-ডাল, প্রশ্ন উপভোক্তাদের

টানা তিন মাস খাদ্যসামগ্রী বিলি বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ উপভোক্তাদের বড় অংশ।

অমিল: শিশু ও প্রসূতিদের খাবার দেওযা বন্ধ রযেছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে।

অমিল: শিশু ও প্রসূতিদের খাবার দেওযা বন্ধ রযেছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২১ ০৫:০৯
Share: Save:

গত তিন মাস ধরে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) আওতায় থাকা শিশু ও প্রসূতিদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া বন্ধ রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে শেষবার চাল-ডাল দেওয়া হয়েছিল।

টানা তিন মাস খাদ্যসামগ্রী বিলি বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ উপভোক্তাদের বড় অংশ। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে বা ফোনে শিশুদের অভিভাবকেরা বারবার জানতে চাইছেন, কেন তাঁদের চাল-ডাল দেওয়া হচ্ছে না। কবে থেকেই বা সে সব দেওয়া হবে। উত্তর দিতে পারছেন না অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।

বনগাঁ ব্লকের শ্রীমন্তপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নথিভুক্ত শিশুর সংখ্যা ৭৭। আদিবাসী দরিদ্র পরিবারের শিশুরা সেখানে পড়াশোনা করে। ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের ২ কেজি করে চাল এবং ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল দেওয়া হয়েছিল। ওই কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ক্ষমা বিশ্বাস মালাকার বলেন, ‘‘তিন মাস ধরে খাবার দেওয়া বন্ধ। অভিভাবকেরা ফোনে অভিযোগ করে জানতে চাইছেন, প্রাথমিক স্কুল থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলে এখানে মিলবে না কেন। মনে হচ্ছে দোষটা যেন আমাদের। আমরা যেন ইচ্ছে করে খাবার দিচ্ছি না। অভিভাবকদের বলেও বোঝাতে পারছি না।’’

একই প্রশ্নের মুখোমুখি কমবেশি জেলার প্রায় সব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আগে কেন্দ্রেগুলি থেকে রান্না করা খাবার দেওয়া হত। গত বছর লকডাউন-এর সময় থেকে তা বন্ধ। তার পরে উপভোক্তাদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে চাল, ডাল, আলু ও ছোলা দেওয়া হচ্ছিল। ফেব্রুয়ারির পরে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি মাসে বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে আলু ও ছোলা দেওয়া হয়নি উপভোক্তাদের। সরকার ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চালু করতে চলেছে। উপভোক্তা পরিবারগুলির দাবি, তাঁদের জন্য রেশন সামগ্রীর তালিকায় অঙ্গনওয়াড়ির ডাল ও ছোলা যুক্ত করা হোক।

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের এক জেলা আধিকারিক বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের চালের ৭০ শতাংশ আসে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) থেকে। দীর্ঘদিন চাল মেলেনি। জানতে পেরেছি, এফসিআই থেকে চাল দেওয়া শুরু হবে। শীঘ্রই উপভোক্তাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া যাবে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, জুন থেকে ফের খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায়, আইসিডিএস প্রকল্পে ছ’বছরের নীচে শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ। প্রসূতিদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার। প্রকল্পে নথিভুক্ত শিশুদের বেশির ভাগই আসে দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা পরিবারগুলি থেকে। গত বছর লকডাউন-এর সময় বেশির ভাগ শিশুর অভিভাবকদের কাজকর্ম ছিল না। করোনা ঠেকাতে জারি বিধিনিষেধের কারণে অনেকেরই রুজি-রোজগারে টান পড়েছে। গাইঘাটার এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘বিধিনিষেধ আরোপের ফলে যানবাহন চলছে না। অনেক অভিভাবকের কাজকর্ম বলতে কিছুই নেই। অসুবিধায় পড়ে তাঁরা খাবার চেয়ে আমাদের ফোন করছেন।’’

ইয়াস ও ভরা কটালের ধাক্কায় সঙ্কট আরও বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। সকলেই চাইছেন শিশুদের দ্রুত খাবার দেওয়া শুরু হোক। তা না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে শিশুরা। যদিও, আইসিডিএস’র এক ব্লক আধিকারিক বলেন, ‘‘অপুষ্টিতে শিশুদের ভোগার কোনও খবর পাইনি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার খাওয়া বা বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তা বন্ধ হওয়ায় ওঁরা সমস্যায় পড়েছেন।’’ প্রকল্পের আর এক ব্লক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকার থেকে এখন বিনামূল্যে রেশন থেকে চাল, গম ও আটা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অঙ্গনওয়াড়ির থেকে খাবার না মিললেও মানুষের খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না।’’

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে মালপত্র বহনের কাজে যুক্ত রয়েছেন অনেকে। তাঁদের ‘ক্যারিং কনট্যাক্টর’ বলা হয়। খাদ্যসামগ্রী দেওয়া বন্ধ থাকায় তাঁদের রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy