সাগরের বেহাল নদীবাঁধ। নিজস্ব চিত্র
কটালের পরে প্রায় ১০ দিন কেটে গেল। এখন বাঁধ মেরামতির কাজ শুরুই হল না। রবিবার থেকে পূর্ণিমার কটালের আগে জোয়ারের জল বাড়া শুরু হবে। এই পরিস্থিতিতে দুশ্তিন্তায় আছে বহু পরিবার।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমা এলাকায় গত ১৯ অগস্ট অমবস্যার ভরা কটালে জোয়ারের তোড়ে বিভিন্ন নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভাঙে। শ’য়ে শ’য়ে ঘরবাড়ি, মাছের পুকুর, চাষের জমি নোনা জলে ডুবে যায়। জল নামতে শুরু করার পরে ভাঙতে থাকে বহু মাটির বাড়ি। অনেকেই এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেনি। কেউ ত্রাণ শিবিরে কেউ উঁচু রাস্তা বা বাঁধের উপরে পলিথিনের তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিপর্যয়ের পরে সেচ দফতর থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বাঁধ মেরামতি হলেই ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি সারিয়ে ফিরতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু বাঁধ সারানোর কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তাঁরা।
গত কটালে সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতে সুমতিনগর ও বঙ্কিমনগর গ্রামের কাছে প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তাতে প্রায় একহাজার বিঘা কৃষিজমি নোনা জলে ডুবে যায় বলে অভিযোগ। বাঁধের কাছে বসবাসকারী শ’দেড়েক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। তাঁরা কেউ ফিরতে পারেননি এখনও। ঠিক মতো খাবার পাচ্ছেন না বলে অনেকের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে বঙ্কিমনগর গ্রামের কাছে মুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধে বেশ কিছুটা ধস নেমেছিল। সে সময়ে জল না ঢুকলেও বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা ওই বাঁধটি মেরামতির জন্য একাধিকবার বিভাগীয় দফতরকে জানানো হয়। কিন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। বাসিন্দাদের বক্তব্য, সে সময়েই যদি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা বাঁধের ওই অংশটি সারিয়ে ফেলা হত, তা হলে এ বার এত বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হত না।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দাস বলেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশেই নদী বাঁধের কিছুটা অংশ বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। সে সময়ে একাধিকবার আমরা সকলে জানিয়েছিলাম। এখন বাঁধ ভেঙে এলাকায় প্লাবিত হয়ে আমার প্রায় ১৫ বিঘা কৃষিজমি, ৩টি মাছের পুকুর নোনা জলে নষ্ট হয়ে গেল। ঘরটা ভেঙে যাওয়ায় আমাদের তিন ভাইয়ের পরিবারের ১৫ জন সদস্য পলিথিনের ত্রিপল ঢাকা তাঁবুতে বাস করছি। এখনও পর্যন্ত সরকারি সাহায্যে পাইনি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে যেটুকু খাবার দিচ্ছে, তা দিয়ে কোনও মতে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে।’’ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরে সেচ দফতরের আধিকারিকেরা এসে পরিদর্শনে এসে দ্রুত মেরামতির আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে জানালেন স্বপন। কিন্ত এখনও কাজ শুরুই হয়নি। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া লিপিকা দাসের অভিযোগ, ‘‘বাঁধ সময় মতো সারালে এই দুর্ভোগে পড়তেই হত না।’’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধ কেন সারানো শুরু হল না? এ বিষয়ে কাকদ্বীপ সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কল্যাণ দে বলেন, ‘‘সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনে দ্রুত বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হবে।’’
কিন্তু পূর্ণিমার আগে সেই কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ঘরহারা মানুষজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy