Advertisement
E-Paper

ইংল্যান্ডে সে কালের রানির কাছেও পৌঁছেছিল সন্তোষের হাতের কাজ

যে জিনিস চোখে দেখতেন, সে জিনিষই কার্যত বানিয়ে ফেলতে পারতেন সন্তোষ। বাঁশের কাজ শিখেছিলেন স্থানীয় পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য নামে এক শিল্পীর কাছে।

বাঁশের তৈরি এ ধরনের পালতোলা ময়ূরপঙ্খী নৌকোই গিয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে।

বাঁশের তৈরি এ ধরনের পালতোলা ময়ূরপঙ্খী নৌকোই গিয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে। নিজস্ব চিত্র ।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৬
Share
Save

এক সময়ে তাঁর ‘হাতের কাজ’ দেখে অবাক হয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। সেই কাজ জাপানিদের শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠাতে চেয়েছিলেন সে দেশে। কিন্তু ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে সাহস পাননি মা। তবে সন্তোষ বিশ্বাস নামে সে দিনে সেই যুবকের হাতে তৈরি বাঁশের ময়ূরপঙ্খী নৌকো সে সময়ে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধর্মবীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন সন্তোষের হাতে তৈরি বাঁশ ও খড়ের শিল্পকর্মের। তৎকালীন ১২ লক্ষ টাকার অর্ডারও সন্তোষের জন্য জোগাড় করেছিলেন তিনি। কিন্তু আর্থিক কারণে সে কাজও করতে পারেননি সন্তোষ। পারলে হয় তো তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হত না, আফসোস যায় না বৃদ্ধের। বাঁশ দিয়ে তাঁর হাতে তৈরি জাহাজ উপহার পেয়ে বেজায় খুশি হয়েছিলেন মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন! কিন্তু সে সবই এখন অতীত।

যে জিনিস চোখে দেখতেন, সে জিনিষই কার্যত বানিয়ে ফেলতে পারতেন সন্তোষ। বাঁশের কাজ শিখেছিলেন স্থানীয় পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য নামে এক শিল্পীর কাছে। তবে খড়ের কাজ নিজের উদ্যোগ আর প্রচেষ্টাতেই শিখেছিলেন সন্তোষ। এক সময়ে তাঁর তৈরি এই শিল্পসামগ্রী খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল শহর কলকাতা থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার মেলা ও প্রদর্শনীতে। নিজে কাজ করতেন, আর তাঁর তৈরি শিল্পসামগ্রী নিয়ে দাদা অশোক বিশ্বাস মেলায় মেলায় বিক্রি করতেন। এই উপার্জনেই কার্যত চলত সংসার।

বাবা ছিলেন গ্রামীণ দাঁতের চিকিৎসক। তাঁর কাছে দাঁতের চিকিৎসার হাতেখড়িও নিয়েছিলেন সন্তোষ। এলাকার কোনও মানুষের কাঁটা-ছেঁড়া সহ নানা টুকটাক রোগে অন্যতম ভরসা ছিলেন এক সময়ে। এলাকায় পরিচিত হন ‘জাম্বো ডাক্তার’ নামে। অল্প পয়সায় গ্রামের মানুষের দাঁতের চিকিৎসা ও নিজের হাতের কাজ এক সঙ্গে চলত। কিন্তু সংসারে অভাব লেগেই ছিল। ভাই গোপাল বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পেলে কিছুটা হাল ফেরে সংসারে। কিন্তু সংসার বড় হতেই ভাঙতে শুরু করে। একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনও মতে কাটতে থাকে দিন।

বর্তমানে ক্যানিংয়ের তালদি জনকল্যাণ মোড় এলাকায় নিজের পৈতৃক ভিটেতেই থাকেন সন্তোষ। জীবন সায়াহ্নে এসে অভাবে দিন কাটছে এই গুণী হস্তশিল্পীর। ৮৬ বছর বয়সে এখনও গ্রামের মানুষদের ন্যূনতম পারিশ্রমিকে দাঁতের চিকিৎসা করেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে কমেছে হাতের কাজ করার ক্ষমতা। তবুও সুযোগ পেলে এখনও বাঁশ, খড় দিয়ে ফুল, পাখি, নৌকো— আরও কত কিছু তৈরি করে ফেলেন নিখুঁত ভাবে।

তৎকালীন রাজ্য সরকার তাঁর শিল্পকর্মকে সম্মান জানালেও বর্তমান সরকার সে ভাবে খোঁজ রাখে না বলে জানালেন সন্তোষ। বললেন, ‘‘অশক্ত শরীর, চোখের জোর কমেছে। কোনও মতে দাঁতের চিকিৎসা করে দিন কাটে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিল্পীদের সম্মান করেন, সম্মান করেন তাঁদের শিল্পকর্মকেও। কিন্তু আমার খোঁজ কেউ রাখেন না।” স্ত্রী মালতি বলেন, ‘‘এখন আর সে ভাবে কাজ করতে পারেন না উনি। রাস্তার পাশে কুঁড়ে ঘরে রোগী দেখে যে ক’টা টাকা উপার্জন করেন, তাই দিয়ে কোনও মতে চলছে। ওঁর হাতের কাজ অনেককেই মুগ্ধ করেছিল এক সময়ে। তবে এখন আর কেউ খোঁজ রাখেন না।’’

ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘ওঁর কথা শুনেছি, খুব গুণী মানুষ। আমি অবশ্যই পরিবারটির পাশে আছি। খুব শীঘ্রই ওঁর সঙ্গে দেখা করব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Queen Elizabeth II Canning

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}