Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
নাবালিকার বিয়ের আসরে পুলিশ

পুলিশের ঘা থেকে বাঁচতে মালা-টোপর ফেলে রেখে দৌড় বরের

মাঝরাস্তায় নতুন চটি ছিঁড়ল। সিল্কের ধুতি খুলে যাওয়ার উপক্রম হল। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল এলোমেলো হল। কপালে চন্দনের আলপনা যাচ্ছে তাই ভাবে ঘাঁটল।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

এই শেষ অঘ্রাণের সন্ধ্যায় দরদর করে ঘামছিলেন তিনি!

২৭ বছর বয়সে আচমকা আধ কিলোমিটার দৌড়! পিচরাস্তা ধরে, রেললাইন টপকে, খেতের মধ্যে দিয়ে দৌড়নো কি কম কথা!

মাঝরাস্তায় নতুন চটি ছিঁড়ল। সিল্কের ধুতি খুলে যাওয়ার উপক্রম হল। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল এলোমেলো হল। কপালে চন্দনের আলপনা যাচ্ছে তাই ভাবে ঘাঁটল।

বরাত জোরে এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন। ভাগ্যিস, পিছনে ছুটে আসা কনের বাড়ির লোকের ডাকে আর ফেরেননি! নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছেন গাইঘাটার গাতি গ্রামের যুবকটি। সতেরো বছরের মেয়েটিকে বিয়ে করতে এসে যে পুলিশের খপ্পরে পড়তে হচ্ছিল! আর ‘পুলিশে ছুঁলে আঠেরো ঘা’!

বুধবার সন্ধ্যায় টোপর ফেলে বরের এই দৌড় দেখল গাইঘাটার শিমুলপুর রেল কলোনি। চাইল্ড লাইন সূত্রে এ দিন ওই বিয়ের কথা জানতে পারেন গাইঘাটার বিডিও বিব্রত বিশ্বাস। তারপরেই পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা ওই বিয়েবাড়িতে হানা দেয়।

তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা হবে। বিয়েবাড়ি তখন নিমন্ত্রিতদের উপস্থিতিতে সরগরম। বরও হাজির। কিছুক্ষণের মধ্যেই কনের সঙ্গে শুভদৃষ্টি হওয়ার কথা। খোশমেজাজেই ছিলেন বর। হঠাৎই ছন্দপতন!ভিড় থেকেই ভেসে এল কথাটা। বিয়েবাড়িতে পুলিশ ঢুকছে। ঢুকছেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ইলা বাগচী এবং জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ। বরকে আর পায় কে! সব ফেলে দে দৌড়। প্রায় আধ কিলোমিটার দৌড়ে এক পরিচিতের বাড়ি সেঁধিয়ে যান। ও দিকে, পুলিশ প্রশাসনের লোকেরা এবং জনপ্রতিনিধিরা কনের অভিভাবকদের বোঝাতে শুরু করেন, কেন নাবালিকার বিয়ে দেওয়া অন্যায়। বন্ধ হয় বিয়ে। নাবালিকার মা মুচলেকা দিয়ে জানান, আঠেরো বছর বয়স না-হলে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা হাবড়ার মছলন্দপুরের বাসিন্দা। সে মায়ের সঙ্গে থাকে। বাবা অন্যত্র থাকেন। বাবা-মায়ের সম্পর্ক নেই। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান।

শিমুলপুরে মাসির বাড়ি থেকে মেয়েটির বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। মেয়েটির মা পুলিশকে জানিয়েছেন, অভাবের সংসারে ভাল পাত্র হাতছাড়া করতে চাননি। এক বছর পরে মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি যাতে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা পান, তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন ধ্যানেশবাবুরা।

বিয়ে তো বন্ধ হল। কিন্তু বর কোথায়?

অনেক খোঁজাখুঁজির পরে বরকে পাওয়া গেল আধ কিলোমিটার দূরের সেই বাড়িতে। তাঁকেও বোঝানো হল। পুলিশ নেই দেখে তিনি স্বস্তি পেলেন। তারপরে ঘোষণা করলেন, ‘‘ওই মেয়েকেই বিয়ে করব। তবে, আঠেরো বছর বয়স হলে।’’ আর পা পিছলোতে রাজি নন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Teenage Marriage Police Groom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE