ধ্বংস: বাসন্তীতে এ ভাবেই কাটা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র
ম্যানগ্রোভ কেটে নদীর চরে মেছো ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে বাসন্তী ব্লকের জ্যোতিষপুর পঞ্চায়েতের হরেকৃষ্ণপুর মৌজায় বিদ্যা নদীর চরে প্রায় ১০ বিঘা জমির ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি করা হচ্ছে বেআইনি ভেড়ি। অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্না দাসের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিমাই দাস ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী মিলে ম্যানগ্রোভ কেটে ওই মেছো ভেড়ি তৈরি করছেন। ইতিমধ্যে কয়েকশো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে বনকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ওই এলাকায় বিদ্যা নদীর চরে কয়েক হাজার বিঘা জমির উপরে ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছিল। এখন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সেই সব গাছ কেটে মেছো ভেড়ি তৈরি করছেন। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। উল্টে, এক দফতর আর এক দফতরের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব সারছে বলেও অভিযোগ। এ বিষয়ে ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক অদিতি চৌধুরী বলেন, ‘‘এ রকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু ভৌমিক বলেন, ‘‘বিদ্যা নদীর চরে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছিল। সেই গাছ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কেটে মেছো ভেড়ি তৈরি করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করা হচ্ছে, তাতে ধ্বংস হয়ে যাবে সুন্দরবন।’’ তাঁর অভিযোগ, এ নিয়ে বাধা দিতে গেলে তাঁদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়। প্রশাসনের সব স্তরে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না।
বাসন্তীর ওই এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের অধীনে পড়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের অধীন মাতলা ২ রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ম্যানগ্রোভ কাটার জন্য কোনও সরকারি অনুমতি নেওয়া হয়নি। যে কোনও গাছ কাটতে গেলে বন দফতরের অনুমতি লাগে। দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর চরে বন দফতরের পাশাপাশি সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ম্যানগ্রোভ লাগিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ওই সব দফতর গাছ লাগানোর পরে তা রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থা করে না। বন দফতরের একার পক্ষে সব সময় নজরদারি সম্ভব হয় না। সেই সুযোগে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা ওই সব গাছ ধ্বংস করছে। ম্যানগ্রোভ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতা নিমাই দাসের স্ত্রী তথা পঞ্চায়েত প্রধান ঝর্না দাস বলেন, ‘‘আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ওই এলাকায় আগেই মেছো ভেড়ি তৈরি করা হয়। আমার স্বামী আগে ওই ভেড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন নেই। যারা এক সময়ে ওই এলাকায় এক সঙ্গে ভেড়ি তৈরি করেছিল, তারাই এখন আমার স্বামীর বদনাম করতে এ সব অভিযোগ করছে।’’
বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ম্যানগ্রোভ কেটে মেছো ভেড়ি তৈরি করার খবর পেয়েছি। আমাদের কর্মীরা সব কিছু খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা পুলিশকেও অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy