হাসপাতালের আবাসনের চেহারা। নিজস্ব চিত্র।
মোটরবাইক থেকে পড়ে গিয়ে ডান হাতে চোট পেয়েছিল এক কিশোর। দ্রুত রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা এক পলক দেখেই ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পাঠাতে বলেন।
এমন উদাহরণ রাশি রাশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে একটু গুরুতর অসুস্থ রোগী এলেই অন্যত্র পাঠানো দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, অভিযোগ এমনটাই।
এ ছাড়াও পরিকাঠামোর অভাব আরও আছে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে। স্থানীয় মানুষজন জানালেন, কয়েক মাস আগে স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রী রায় হাসপাতালে এসেছিলেন। সে সময়ে কর্মীরা তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন বিধায়ক। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
মণি-নদী লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল ১৯৮০ সাল থেকে একতলা ভবনে চলছে। প্রায় ১০ একর জমির উপরে হাসপাতালের পাশেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন। প্রত্যেক দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ৩০০ জন রোগী আসেন। আগে মাত্র ৬০টি বেড ছিল। মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১০০টি বেড চালু করা হয়েছে। কিন্তু বেড বাড়লেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী বাড়েনি। হাসপাতালে এখন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ১০ জন নার্স, ২ জন ফার্মাসিস্ট। এ ছাড়াও আছেন আরও কিছু কর্মী। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সে সব নেহাতই কম।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজির ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। কয়েক বছর আগে এখানে ইসিজি করার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু কর্মীর অভাবে তা-ও বন্ধ।
অথচ, এই হাসপাতালের উপরে রোগীর চাপ প্রচুর। রায়দিঘি ছাড়াও কুলতলি, জয়নগর ও পাথরপ্রতিমার বহু মানুষ নির্ভরশীল। ওই হাসপাতালের অধীনে রয়েছে ২৩ নম্বর লাট, বাড়িভাঙা, পুরন্দরপুর, ও গিলারছাঁট ৩টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রত্যেক মাসে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রায় ১৫০-২০০ প্রসব হয়। অথচ স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে সিজার করা হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস পুরকাইত, রমজান মোল্লারা জানান, এই হাসপাতালে স্ত্রীরোগ, শিশু রোগ ও অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের খুব প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে এগুলির ব্যাবস্থা করা হোক।
হাসপাতাল ভবনে সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। ওয়ার্ডের অবস্থাও তথৈবচ। ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। বড় বড় চাঙড় খসে পড়েছে। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই অবস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনের। ছাদে ফাটল ধরায় বর্ষায় চুঁইয়ে জল পড়ে। মেঝেতে জল দাঁড়িয়ে যায়। ওষুধ ও কাগজপত্র ভিজে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হয়।
হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী নেই। এক নার্সের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীর পরিবারের লোকজন হামলা চালাতে পারে। নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি।’’
হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, ভোটের আগে সব দলের প্রার্থীরা এই হাসপাতালের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকই। কিন্তু ভোট শেষ হলেই সব শেষ।
দেবশ্রী এ বারও ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যাগুলি জেলাশাসককে একাধিকবার বলেছি। তবুও কী কারণে হাসপাতালের সমস্যা সমাধান হয়নি বুঝতে পারছি না।’’ তবে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy