পোষা ছাগলের জন্য গাছের পাতা আনতে গিয়েছিলেন এক মহিলা। বিদ্যুতের তারে হাত লেগে মৃত্যু হল তাঁর। অভিযোগ, স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজের বাড়ির চারপাশের বেড়ায় বেআইনি ভাবে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে রেখেছিলেন।
বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার মনমোহনপুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম সবিতা মুদি (৫৪)। আপাতত পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্ত মিলন ভক্তকে আটক করা হয়েছে। এ দিকে, সবিতার মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিলন গাছ কাটার ব্যবসা চালায়। তার বাড়ির ভিতরে ঢুকে নাকি রাতের লোকজন মলত্যাগ করে যেত। সে কারণেই সে বেড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ করে রেখেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশকে।
এলাকাটি ডুমা পঞ্চায়েতের অধীন। প্রধান ছন্দা সরকার বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি অত্যন্ত অন্যায় করেছে। এ ভাবে কাউকে না জানিয়ে বেড়ায় বিদ্যুতের তার জড়িয়ে রাখা উচিত হয়নি। কেউ যদি জমিতে মলত্যাগ করে যায়, সে কথা পঞ্চায়েতকে জানাতে পারত। আমরা পদক্ষেপ করতাম।’’ প্রধানের দাবি, বুধবার দুপুরে সবিতার মৃত্যুর পরে মিলন ঘটনার কথা জানাতে গিয়েছিল। প্রধান জানিয়ে দেন, এমন ঘটনা তিনি সমর্থন করেন না। আইন আইনের পথে চলবে।
২০১৭ সালে অশোকনগরের সেনডাঙায় একট পোলট্রিতে মুরগি চুরি রুখতে হুকিংয়ের তার টেনে পোলট্রির গায়ে জড়িয়ে রেখেছিল মালিক। তাতে দুই কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হয়। পোলট্রি মালিক-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েকজনকে। তার কয়েক মাসের মধ্যেই গাইঘাটাতেই পোলট্রির গায়ে জড়ানো বিদ্যুতের তারে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবিতা বাড়ির কাছে লম্বু বাগান থেকে ছাগলের খাওয়ার জন্য পাতা আনতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। মিলনের বেড়ার পাশে লম্বু বাগান। বেড়ার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে তিনি কোনও ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁর ছেলে কৃষ্ণ মাকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন। বাসিন্দারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন।
কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আমি শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। বোন ব্যাঙ্কে গিয়েছিল। বাবা মাঠের দিকে গিয়েছিল। মা বাড়িতে একাই ছিল। বাড়িতে ফিরে মাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করি। দেখি দূরে মাটিতে মা পড়ে রয়েছে। ছুটে গিয়ে তুলি। দেখি শরীরের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।’’ কৃষ্ণর অভিযোগ, কাছেই মিলন দাঁড়িয়ে ছিল। সে মাকে বাঁচাতে আসেনি। পুলিশের কাছে মিলনের নামে লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মিলনের বাড়িতে কেউ নেই। পাড়া প্রতিবেশীরা ক্ষিপ্ত। মুন্নি সাইয়াল নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘শুনেছি রোজ সকালে মিলন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিত। সন্ধ্যার পরে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ করে রাখত। এ দিন সকালে ভুলে গিয়েছিল।’’ গ্রামের সকলেরই বক্তব্য, কেউ যদি বাড়ি নোংরা করে রেখে যায়, তার অন্য প্রতিকার ভাবতে পারত মিলন। এ ভাবে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে সে-ই মৃত্যু ডেকে এনেছে।
এলাকাটি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের হাবড়া ডিভিশনের অন্তর্গত। তারা জানিয়েছে, এ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা পুরোপুরি বেআইনি। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গাইঘাটা স্টেশন ম্যানেজারকে আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে বলছি। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’ এ ক্ষেত্রে তারা পুলিশের কাছে ফৌজদারি মামলাও করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy