উড়েছে চাল। হাবড়ার কুমড়া পঞ্চায়েতে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে গোটা গোবরডাঙা শহরটাই। বহু বাড়িঘর ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে আছে। বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, সরকারি প্রকল্পের জল সরবরাহ বন্ধ। গরমে নাভিঃশ্বাস উঠেছে শহরবাসীর। অনেক বাড়িতেই ছাউনি নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা থমকে। কয়েকটি রাস্তা গাছ পড়ে আছে। সব মিলিয়ে বুধবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই রয়েছে পুরো শহর। এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কায় থমকে গিয়েছে নাগরিক জীবন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩২ হাজার মানুষ। বাড়িঘর সম্পূর্ণ ভেঙেছে ১৭৫০টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৬,৫৬০টি। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে ৪৫০টি। কয়েকটি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোবরডাঙা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি টাকা।’’
পুরসভা এলাকার মানুষের মধ্যে মধ্যে এখন ত্রিপলের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। খোলা আকাশের নীচে রয়েছেন অনেকে। প্রশাসন থেকে পুরসভা পেয়েছে মাত্র ৭০০টি ত্রিপল। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে প্রায় ৩ হাজার ত্রিপলের প্রয়োজন। গোবরডাঙায় আম চাষ হয়। এখানকার আম বাইরে রফতানি হয়। ঘূর্ণিঝড়ে আম চাষ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গিয়েছে। সুভাষ মিস্ত্রি, গৌর ঘোষের মতো আমচাষিরা লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানালেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা থেকে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে এলাকা। পথঘাট জনশূন্য। ভুতুড়ে পরিবেশ। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মানুষ মোবাইল চার্জ দিতে পারছেন না। ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছেন না। পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ বন্ধ। ওই জল অবশ্য আগে থেকেই পানীয়ের উপযুক্ত ছিল না। তা-ও কিছু মানুষ ব্যবহার করতেন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই জল কিনে খেতে অভ্যস্ত। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ওই জল সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে। বাড়িতে মোটর চলছে না। নিত্য প্রয়োজনে জলের অভাব দেখা দিয়েছে।
তবে সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এসেছেন কয়েকজন। গোবরডাঙায় এখন ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর পরিষেবা শুরু হয়েছে। ভ্যানের উপরে জেনারেটর চাপিয়ে বসতবাড়ির কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে মানুষ এক ঘণ্টা জেনারেটর পরিষেবা পাচ্ছেন। অনেকে এক ঘণ্টার জন্য সংযোগ নিয়ে পাম্প চালিয়ে ট্যাঙ্কে জল ভরে নিচ্ছেন। ইনভার্টার, মোবাইল চার্জ করে নিচ্ছেন। এক সঙ্গে কয়েকটি বাড়িতে এ ভাবে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এক ঘণ্টার জন্য জেনারেটর পরিষেবা নিতে লাগছে ১৮০-২০০ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা, নাট্যব্যক্তিত্ব আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক ঘণ্টায় জেনারেটর সংযোগ নিয়ে ইনভার্টার চার্জ যা হচ্ছে, তাতে বেশিক্ষণ কাজ মিটছে না।’’ একটি স্কুলের শিক্ষাকর্মী মানিক ঘোষ বলেন, ‘‘নিবেদিতা শিশুতীর্থ স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের তিন ঘণ্টা জেনারেটর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। তা দিয়েই মোবাইলে চার্জ দিচ্ছি। অনেকেরই অবশ্য সেই সুযোগ নেই।’’
এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের গভীর নলকূপ আছে। সংখ্যায় কম। কঙ্কনা বাওরের কাছে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। অনেকেই সেখানে যাচ্ছেন জল আনতে। শঙ্কর বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। পুরসভা, থানা এবং হাসপাতালে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চলে আসবে। কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারব বলে মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy