সতর্কতা: হাসনাবাদে প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। ছবি: নির্মল বসু।
ধয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। বিপর্যয় মোকাবিলায় সব রকম ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন ফ্লাড শেল্টার ও স্কুলগুলিতে শিবিরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক, স্যানিটাইজারও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলি জীবাণুমুক্ত করার কাজও চলছে জোরকদমে। পাশাপাশি, মানুষকে সতর্ক করতে চলছে প্রচার। বহু জায়গা থেকেই মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে বেশ কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনটি খালি ট্রলার নিয়ে পুলিশ ওই দ্বীপে যায়। নদী লাগোয়া চুনপুড়ি, খাঁপাড়া, খাসিমারা, বাগপাড়া, হাটখোলা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য বোঝানো হয়। তবে বেশির ভাগ মানুষই গৃহপালিত পশুপাখি ফেলে যেতে রাজি হননি। প্রশাসন সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত প্রায় শ’খানেক বাসিন্দাকে ট্রলারে করে সাগর দ্বীপে আনা হয়। আপাতত ঘোড়ামারা ঘাটে পুলিশ ট্রলার মজুত রেখেছে। কেউ সাগরদ্বীপে আশ্রয় নিতে চাইলেই তুলে নিয়ে আসা হবে। কাকদ্বীপ মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্ত ত্রাণ শিবিরে খাবার পাঠানো হয়েছে। একমাত্র সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ বিপজ্জনক এলাকা বলেই ওখান থেকে মানুষকে সরিয়ে সাগর দ্বীপে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
এ দিন সকালে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ফ্রেজারগঞ্জ-বকখালি এলাকা পরিদর্শনে যান ডিআইজি প্রবীণকুমার ত্রিপাঠি, আইজি রাজীব মিশ্র ও সুন্দরবন জেলা পুলিশের সুপার বৈভব তিওয়ারি, কাকদ্বীপ মহকুমাপুলিশ আধিকারিক অনিল রায়-সহ অন্য আধিকারিরা। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন তাঁরা। কথা বলেন বাসিন্দাদের সঙ্গে। পরে সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার যান মৌসুনি দ্বীপেও।
গোসাবার কুমিরমারিতে ত্রাণ শিবিরে ঢোকানো হচ্ছে গ্রামবাসীদের। ছবি: সামসুল হুদা।
বিপর্যয় মোকাবিলায় এ দিন ক্যানিং মহকুমাশাসক বন্দনা পোখরিয়ালের নেতৃত্বে একটি প্রশাসনিক বৈঠক হয়। সেচ, বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের পাশাপাশি এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ আধিকারিকরাও। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সেচ দফতরের কর্মীরা দুর্বল নদীবাঁধ এলাকায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। বিদ্যুৎ দফতর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ক্যানিং ১ ব্লকের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি করা হয়েছে। দুর্যোগের আগে নদী তীরবর্তী মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাবে এই দল। বিপর্যয়ের সময় এলাকার মানুষকে উদ্ধারের কাজও করবেন তাঁরা। গত দুদিন ধরে এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সতর্কতামূলক প্রচারের কাজও করানো হচ্ছে এদের দিয়ে।
এ দিন দুপুরে কাকদ্বীপে মহকুমা শাসকের দফতরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলাশাসক পি উলগানাথন, মন্ত্রী, বিধায়ক, পুলিশ সুপার, এসডিও, বিডিও সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা ছিলেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নদী তীরবর্তী এলাকা এবং সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আরও ৬০ হাজার মানুষকে সরানো হবে। বহু মৎস্যজীবীকেও সুন্দরবনের নদী, সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। জেলাশাসকের দফতর, মহকুমাশাসকের দফতর, ব্লক, পঞ্চায়েতে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ওই সব কন্ট্রোল রুমে স্যাটেলাইট ফোন, রেডিও ট্রান্সমিশন মোবাইলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবাতে এনডিআরএফ টিমকে নিযুক্ত করা হয়েছে। রাস্তায় যদি কোনও গাড়ি আটকে পড়ে তার জন্য ব্রেকডাউন ভ্যান মজুত করা হয়েছে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ক্যানিং, সাগর, নামখানায় একজন করে অতিরিক্ত জেলা শাসককের অধীনে বিপর্যয় মোকাবিলা টিম প্রস্তুত আছে। ইতিমধ্যে আমরা কাকদ্বীপে মেগা কন্ট্রোল রুম খুলে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।”
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি এলাকাতেও সোমবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রচার শুরু হয়। উপকূলবর্তী যোগেশগঞ্জ, কালীতলা, গোবিন্দকাটি, সাহেবখালি এলাকা থেকে বহু মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে তুলে আনা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের তরফে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন নদী বাঁধ উঁচু করা এবং মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় ৩০ জনের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী চলে এসেছে হাসনাবাদে। এ দিন তারা হাসনাবাদ, ভবানীপুর এলাকাতে নদী পাড়ে মাইক প্রচার করেন। নদীর ধারের মানুষকে নিরাপদ দুরত্বে স্কুল, ফ্লাড শেল্টারে সরে যাওয়া জন্য অনুরোধ করেন। হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আয়লা, বুলবুল, ফনির মতো ঝড়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমফান মোকাবিলায় সব রকম সতর্কতা ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ এ দিকে দুই জেলার বহু জায়গাতেই মাঠ ভরে রয়েছে বোরো ধানে। ঝড়ের পূর্বাভাসে রাত জেগে ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ করছেন কৃষকরা। বসিরহাটের দুই ব্লকের কৃষি দফতরের তরফে চাষিদের ধান কাটার মেশিন দেওয়া হয়েছে। এই মেশিনে ৩০ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কেটে বস্তায় ভরা সম্ভব বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এ দিন ওই দুই ব্লকে বহু মাঠেই কৃষকদের ওই মেশিনে ধান কাটতে দেখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy