বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন ডাকবিভাগের কর্মীরা। —নিজস্ব িচত্র
ভয় জমায়েতে। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না ভিড়। মদের দোকান বাদ দিলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেনজির ভিড় হচ্ছে ব্যাঙ্কে টাকা তোলার লাইনে। বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। কেন্দ্র সরকারের গরিব কল্যাণ যোজনার টাকা তোলার জন্য। এটিএম কার্ড নেই বলে অগত্যা ব্যাঙ্কই ভরসা। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার গরিব বাসিন্দারা।
মুশকিল আসান হিসেবে এ বার তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ডাক বিভাগ। টাকা নিয়ে সরাসরি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন ডাক বিভাগের কর্মীরা। এমনকী, এটিএম কার্ড না থাকলেও সমস্যা নেই।
আধার কার্ডেই মিলছে টাকা। সমাজের প্রান্তিক মানুষেরাই নয়, সব গ্রাহকই এই সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে বৃদ্ধ পেনশনভোগী থেকে শুরু করে একলা সংসার চালানো মহিলা— সকলেই খুশি। অন্যরকম ভাবে করোনা-যুদ্ধে সামিল হতে পেরে গর্বিত ডাক বিভাগের কর্মীরাও।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ডাক বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে নিজের নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে যে কোনও ব্যাঙ্কের গ্রাহক ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। পেনশন প্রাপকেরা আবেদন করলে, তাঁদের টাকাও বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবেন ডাক বিভাগের কর্মীরা। এই পরিষেবা পেতে হলে নিজের নিকটবর্তী ডাকঘর অথবা ডাককর্মীর কাছে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও নাম নথিভুক্ত করা যাবে। ডাক বিভাগের প্রেসিডেন্সি-সাউথ রেঞ্জের সুপারিনটেনডেন্ট প্রদত্তকুমার দাস বলেন, “প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন বিভাগের কর্মীরা। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে দূরত্ববিধি লঙ্ঘণের ভয় থাকছে না।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দুটি মুখ্য অফিস সহ মোট ৭৭৪টি ডাকঘর রয়েছে। জেলার প্রতিটি প্রান্তে, গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে ডাক বিভাগের শাখা অফিস। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা এই পরিষেবার সুযোগ পেতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই ক্যানিং সাব পোস্ট অফিসের আওতাভুক্ত ১০৪ টি শাখা অফিসের মধ্যে প্রায় ৪৭টি ডাকঘর এই পরিষেবা শুরু করেছে। রোজ এক একটি ডাকঘর থেকে গড়ে ৫০-৬০ জন গ্রাহক পরিষেবা নিচ্ছেন। ক্যানিং মহকুমা ডাক বিভাগের আধিকারিক সত্যবীর সিং বলেন, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করা থাকলেই এই পদ্ধতিতে টাকা তোলা সম্ভব। রোজই অনেক আবেদন জমা পড়ছে।” ক্যানিংয়ের বাসিন্দা বছর আশির নগেন মাইতি বলেন, “বয়সের ভারে এমনিতেই চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। তার ওপরে করোনা-সংক্রমণের ভয়। ডাক বিভাগের উদ্যোগে ঘরে বসেই পেনশনের টাকা পেলাম।” অন্যদিকে ক্যানিংয়ের তাপসী দাস বলেন, “স্বামী মহারাষ্ট্র থেকে সংসার খরচের টাকা পাঠান। দুই সন্তানকে নিয়ে আমি একলাই থাকি। ব্যাঙ্কে না গিয়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বাড়িতে বসে টাকা পাওয়ায় খুব সুবিধা হয়েছে।” ডাক বিভাগের কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ বলেন, “এই সময়ে বিভাগের সব কর্মীরা এই কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।” ডাক বিভাগের কর্মী নন্দলাল নস্কর, গৌতম দেবনাথরা বলেন, “করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক-পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি আমরাও যে লড়াইয়ের ময়দানে আছি, সেটা ভেবেই ভালো লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy