ছবি: সংগৃহীত।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে গিয়েছিলেন বছর তিরিশের এক যুবক। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখে ওষুধপত্র লিখে দেন। প্রেসক্রিপশনে ‘করোনা সাসপেক্ট’ বা করোনা সন্দেহভাজন বলে লেখাও হয়। কিন্তু যুবকের লালারস পরীক্ষা হয়নি। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেও ভর্তি করা হয়নি।
২ মে ওই ঘটনার পরে যুবক নানা দিকে ঘুরেছিলেন। পরে গ্রামবাসীদের মাধ্যমে সে খবর পৌঁছয় প্রশাসনের কাছে। মঙ্গলবার রাতে মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে যুবককে বাড়ি থেকে নিয়ে ভর্তি করে ব্যারাকপুরের করোনা হাসপাতালে।
এ ক্ষেত্রে যুবককে কী করে ফিরতে দেওয়া হল, কেনই বা আগে করোনা পরীক্ষা হল না, সে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বনগাঁ হাসপাতালে লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। করোনা-আবহে আইসোলেশন ওয়ার্ডও তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এমন অবিবেচকের মতো পদক্ষেপ করলেন, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই যুবকের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। ওষুধপত্র লিখে দেওয়া হয়। তিনি হাসপাতাল থেকে ওষুধপত্র তোলেননি। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই যুবককে চিকিৎসকেরা সরাসরি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারণ, আমাদের যাবতীয় পরীক্ষা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকেই করা হয়। ওই যুবক কিছু না বলে চলে যান। তিনি যে কলকাতায় যেতে পারবেন না, তা আমাদের জানাননি।’’ সুপারের দাবি, চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন তিনি হয় তো আইডি হাসপাতালেই চলে যাবেন। যুবক সাহায্য চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারত বলে জানিয়েছেন সুপার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে সোজা ব্যারাকপুরে করোনা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি রেখে লালারস সংগ্রহ করে বেলেঘাটা আইডিতে পাঠানো হচ্ছে। যুবকের ক্ষেত্রে কেন কোনও পদক্ষেপ শুরুতেই করা হল না, সে প্রশ্নের উত্তরে সুপারের সাফাই, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছিল।’’ যুবকের দাবি, মেদিনীপুরের একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাড়ি কোথায়, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ মে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার পথ হেঁটে গাইঘাটার একটি গ্রামে যান তিনি। যুবকের দাবি, ওই গ্রামে তাঁর বাড়ি। যদিও এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান মৌসুমী সাহা জানিয়েছেন, ওই যুবক এখানে জন্মেছিলেন
ঠিকই, কিন্তু ২০-২২ বছর ধরে তিনি বা পরিবারের কেউ এখানে থাকেন না। বাড়িঘরও নেই। উনি এত দিন বাদে কোথা থেকে এসেছিলেন, জানা নেই।
অচেনা যুবক করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামে ঢুকতেই গ্রামের মানুষজন বাধা দেন। যুবকের কাছে প্রেসক্রিপশন দেখে গ্রামবাসী আরও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা যুবককে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতেন বলেন।
গ্রামবাসীদের যুবক জানান, মেদিনীপুরে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি ট্রাকে করে বনগাঁর হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে গিয়েছিলেন। যুবকের কথায়, ‘‘আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসক দেখে ওষুধ লিখে ছেড়ে দেন।’’
গ্রাম থেকে তাড়া খেয়ে যুবক বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে এসে পৌঁছন। সেখানে বিশ্রামাগারে ছিলেন। মঙ্গলবার স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারেন। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গ্রামের মানুষই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy