প্রতীকী ছবি।
আশঙ্কা ছিলই, এ বার সেটাই কোথাও কোথাও প্রকট হচ্ছে। জমায়েত এড়াতে বন্ধ সামাজিক অনুষ্ঠান। নিয়মের ফেরে বন্ধ রক্তদান শিবিরও। তার ফলে বন্ধ রক্ত সংগ্রহ। ফলে বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তের ভাঁড়ার ক্রমেই শুকিয়ে আসছে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের মতো কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই রক্ত সঙ্কট শুরু হয়েছে। তবে এই অবস্থায় আশার আলো, কিছু মানুষের এগিয়ে আসা। সঙ্কটকালে তাঁরা রক্ত দিতে এগিয়ে আসছেন। চিকিৎসকেরা চাইছেন, আগ্রহীরা সরাসরি ব্লাডব্যাঙ্কে এসেই রক্ত দিন।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন রোগীকে রক্ত দিতে হয়েছে। রক্ত সংগ্রহে যে সব শিবির হওয়ার কথা ছিল, বাতিল হয়েছে সেগুলিও। নতুন করে শিবির করা যাচ্ছে না। তার ফলে শুরু হয়েছে রক্ত সঙ্কট। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ গোপাল পোদ্দার স্থানীয় পরিচিতদের কাছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সে কথা জানতে পেরে রক্তদান করতে এগিয়ে এলেন বনগাঁ- চাঁদপাড়া (ভায়া আংরাইল) অটো অপারেটর ইউনিয়নের সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ হাসপাতালেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। অটো সংগঠনের ২৫ জন সদস্য রক্ত দান করেন। দাতারা মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা পড়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে শুয়ে রক্ত দান করেছেন। দাতাদের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলেন। গোপাল জানান, মার্চ এবং এপ্রিলের ৪ তারিখ পর্যন্ত ১০টি রক্তদান শিবির হওয়ার কথা ছিল। সব ক’টি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এখন ব্লাডব্যাঙ্কে ‘এ’ পজিটিভ এবং ‘এবি’ পজিটিভ রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এপ্রিল ওই অটো সংগঠনের রক্তদান শিবির হওয়ার কথা ছিল। রক্ত সঙ্কটের কথা জানতে পেরে তাঁরাই হাসপাতালে এসে রক্ত দান করেন।
অটো সংগঠনের নেতা নারায়ণ ঘোষ বলেন, “সঙ্কটের কথা জানতে পেরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, হাসপাতালে গিয়েই রক্তদান করব। এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মানুষ হিসাবে সব থেকে বড় কর্তব্য।”
শুক্রবার সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কয়েকজন হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দান করেন। বিজেপির বনগাঁ উত্তর পৌর মণ্ডলের পক্ষ থেকে এ দিন ১৮ জন হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করেছেন।
হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, বসিরহাট, রক্তের শিবির হচ্ছে না। তাই মজুত রক্ত ক্রমশ কমছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। রক্তের প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁদের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে, তাঁদের দাতাকে আনতে অনুরোধ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার জানান, এই মুহূর্তে তাঁদের ভাঁড়ারে বিভিন্ন গ্রুপে ১৪০ ইউনিট রক্ত রয়েছে। রোজ গড়ে ২৫ ইউনিট রক্ত লাগে। বর্তমানে রোগীর চাপ কম থাকায় গড়ে ১২ ইউনিট মতো রক্ত লাগছে। ফলে নতুন করে শিবির না হলে সপ্তাহখানেক পরেই রক্তের সঙ্কট দেখা দেবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদেরও এই সঙ্কটকালে দাতাকে আনার অনুরোধ করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাঁদের ব্লাডব্যাঙ্কেই রক্ত সংগ্রহ করছে। হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছোট ছোট করে শিবির করা হচ্ছে। কেউ নিজের উদ্যোগে রক্ত দিতে চাইলেও তা নেওয়া হচ্ছে। এই হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৬-৭ জনকে রক্ত দেওয়া হয়। সেই রক্ত তাঁদের কাছে রয়েছে।
রক্ত সঙ্কট দেখা দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালেও। রক্তের জোগান স্বাভাবিক রাখতে হাসপাতালের তরফে রোগীকেই ডোনার নিয়ে আসার অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্লাড ব্যাঙ্কেই রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ব্লাড ব্যাঙ্কে ৮০-৯০ ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এই পরিস্থিতিতে রক্তের প্রয়োজনে যে সমস্ত রোগীরা আসছেন, তাঁদের পরিবার বা পরিচিত কাউকে রক্ত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকলের কাছে এই সঙ্কটের সময় ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে রক্ত দিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর আত্মীয়-পরিজন ছাড়াও রোজ ১০-১২ জন রক্ত দিচ্ছেন। তবে তাতেও জোগান স্বাভাবিক করা যায়নি বলেই জানান হাসপাতালের আধিকারিকেরা। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার অধীনে রয়েছেন ১৪০০ থ্যালাসেমিয়া রোগী। এঁদের নিয়মিত রক্ত লাগে। তা ছাড়া জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার-সহ অন্য নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। সমস্যা মেটাতে তাই রোগীর পরিবারের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও বাড়ি থেকে ডোনার আনার জন্য বলা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, লকডাউনের জেরে বেশ কয়েকটি রক্তদান শিবির বাতিল হওয়ার ফলেই এই সমস্যা হয়েছে। তবে ক্যানিং মহকুমায় এখনও পর্যন্ত রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়নি। ব্লাড ব্যাঙ্ক ও ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত রয়েছে বলেই মহকুমা হাসপাতাল জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy