দখল: এ ভাবেই চরে বেড়ে উঠেছে নির্মাণ। নিজস্ব চিত্র।
চর দখলের অভিযোগ এ বার হিঙ্গলগঞ্জেও।
সামসেরনগর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুড়েখালি নদী। এই নদীর এক পাশে সুন্দরবন। তবে পলি জমে জমে নদী ক্রমশ মজে যাচ্ছে। সামসেরনগরে নদী এখন খালের থেকেও সরু আকার নিয়েছে। সেই নদীর চর দখল করে একের পর এক বড় বড় দোকানঘর গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছর। দোকানগুলি যে ভাবে নদীর গায়ের উপর গিয়ে পড়েছে, তাতে সুন্দরবনের ফেন্সিং থেকে দোকানগুলির দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট।
সামসেরনগর বাজার কমিটির সম্পাদক বাপি চক্রবর্তী জানালেন, এলাকায় বাজার দরকার। তাই প্রায় ২০ বছর আগে বাজার গড়ে ওঠে নদীর চরে। তবে তখন দোকানগুলি মাটির ছিল। গত কয়েক বছরে ক্রমশ পাকা ঘর হয়েছে। চর দখল করে গত পাঁচ বছরে আরও প্রায় ২০-৩০টি দোকান তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রায় ১০০টি দোকান আছে এখানে। সবগুলিই নদীর চরে। কারা দেয় এখানে দোকান তৈরির অনুমোদন? বাপি বলেন, ‘‘বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দোকান তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। কাউকে কোনও টাকা দিতে হয় না।’’ তবে এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, স্থানীয় এক নেতা টাকা নিয়ে নদীর চরে দোকান করায় মদত দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, ‘‘একটা সময়ে একদম কাছ থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত এখান থেকে। কিন্তু ক্রমে স্থানীয় রাজনৈতিক মদতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য কংক্রিটের বিল্ডিংয়ে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কুড়েখালি নদী সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’’ অনেকের আশঙ্কা, কিছু বছর পরে হয় তো কিছু এখানে নদীর অস্তিত্বই থাকবে না।
কালীতলা পঞ্চায়েত অফিসের সামনের কালীতলা বাজারেও একের পর এক দোকান গড়ে উঠেছে নদীর চর দখল করে। সামসেরনগর হাইস্কুলের সামনে গত কয়েক বছর হল কমলাখালি বাজারে একের পর এক বড় বড় দোকান ঘর গড়ে উঠছে। এখানেও কুড়েখালি নদীর চরেই চলছে নির্মাণ। এই বাজারের এক দোকানদার বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ৬ হাত চওড়া নদীর চর কিনেছি স্থানীয় এক নেতাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে। তবে লম্বা কতটা, সেটা বিষয় নয়। নদীর দিকে আমি যতটা ইচ্ছা ঢুকে ঘর করতে পারি।’’ নিজেই জানালেন, বন দফতর বারণ করেছিল। শোনেননি। জানা গেল, এই বাজারে প্রায় ৬০টি দোকান আছে। বেশিরভাগই হয়েছে গত পাঁচ বছরে। কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘পর্যটকেরা আসবেন সুন্দরবন দেখতে। তবে তাঁদের তো খেতেও হবে। তাই বাজার প্রয়োজন। এই জন্য কালীতলা থেকে সামসেরনগর পর্যন্ত চারটি জায়গায় বাজার গড়ে উঠেছে। কিন্তু জমির সমস্যার জন্য নদীর চর ছাড়া অন্য জায়গায় বাজার গড়ে তোলা যায়নি। দোকান ছাড়া থাকার ঘর করতে দেওয়া হচ্ছে না চরে। সামসেরনগরে নদীর চরে আর জায়গা নেই। তাই এ বার চেষ্টা করা হচ্ছে অন্য জায়গায় বাজার গড়ে তুলতে।’’ পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’’ সুন্দরবন প্রগতিশীল পরিষদ ও সুন্দরবন উন্নয়ন ভবন নামে স্থানীয় দু’টি সংগঠনের তরফে শ্যামল নাথ ও পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কয়েক বছর আগে নদীর চর দখল নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় কিছুই হয়নি। আমাদের উপরেও রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকায় এগোতে পারিনি।’’ বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি বলেন, ‘‘আমার নজরে এল বিষয়টি। এ বার দেখছি কী করা যায়।’’ এ বিষয়ে বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘বেআইনি দখলমুক্ত করতে প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে আমি বলব। সুন্দরবনকে আড়াল করা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy