Advertisement
E-Paper

Cyclone Yaas: ঘর মেরামত হয়নি, ত্রাণ শিবিরেই বাস

ক্ষতিপূরণের টাকা মেলেনি বলে জানান স্থানীয় বাগডাঙা গ্রামের হাসিবুল খাঁ, কুসুমতলার শক্তি গুড়িয়ারা। ফলে ঘর সারাতে পারেননি কেউই।

অসহায়: ক্ষতিপূরণ মেলেনি, তাঁবুতে চলছে সংসার। হিঙ্গলগঞ্জের টিনপাড়া এলাকায়।

অসহায়: ক্ষতিপূরণ মেলেনি, তাঁবুতে চলছে সংসার। হিঙ্গলগঞ্জের টিনপাড়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:৩৪
Share
Save

ক্ষতিপূরণের আবেদন করলেও এখনও টাকা পাননি অনেকে। ফলে ভাঙা ঘর মেরামত করতে না পেরে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ বা উঁচু রাস্তায় পলিথিন দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন। অনেকে রয়ে গিয়েছেন ত্রাণ শিবিরেই। এমনই পরিস্থিতি নামখানার মৌসুনি পঞ্চায়েত এলাকার। অনেকের আবার অভিযোগ, ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লেও, আংশিক ক্ষতিপূরণ মিলেছে। তা দিয়ে ঘর মেরামত করে উঠতে পারছেন না।

নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষের বাস। ইয়াসে ওই দ্বীপে প্রায় ১২ কিলোমিটার নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে সারা এলাকা নোনা জলে প্লাবিত হয়েছিল।

প্রশাসন সূত্রের খবর, জলোচ্ছ্বাসে ৬ হাজার ৪৯০টি বাড়ি ভেঙে পড়ে। প্রায় ২১ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। কয়েকশো বিঘা কৃষিজমি, বহু মাছের পুকুর ও ৯০টি মাছের ভেড়ি নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ১২০০ পানের বরজের ক্ষতি হয়।

গৃহহীন ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকার দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্প চালু করে। সেখানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ হাজার টাকা ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আবেদন করার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও এখনও বহু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি বলে অভিযোগ।

ওই এলাকায় চিনাই নদীর কাছেই পয়লাঘেরি আদিবাসী পল্লিতে মাটির বাড়ি ছিল হিমাংশু সাউয়ের। ইয়াসে জলোচ্ছ্বাসে সেই বাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে এখনও ফ্লাড শেল্টারেই রয়েছেন বছর পঞ্চাশের হিমাংশু।

তাঁর কথায়, “ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও পেলাম না। টাকা না পেলে বাড়িটাও সারাতে পারছি না।”

আদিবাসি পল্লির বাসিন্দা চন্দ্রকান্ত সোরেনের মাটির ঘরটিরও ইয়াসের পরে আর কোনও অস্তিত্বই ছিল না। দুর্যোগের পর থেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জল নামতেই বাড়ি ফিরে মেরামতির কাজ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, “নোনা জলে ঘরবাড়ি সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। গরু ছাগলও ভেসে গিয়েছে। এখন পড়শির বাড়িতে রাত কাটাচ্ছি। আর দিনের বেলায় ঘর মেরামতের চেষ্টা করছি। কিন্তু আয় বন্ধ। হাতে টাকা পয়সা নেই। সরকারের ক্ষতিপূরণটা পেলে বাড়ি মেরামতে সুবিধা হত।”

ওই এলাকার বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর দাবি, মাটির ঘর একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল একটা পান বরজ ও পুকুরও। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা ঢুকেছে। বিকাশের আক্ষেপ, “আমার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতি হল। অথচ আমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের টাকা পেলাম। এই ক’টা টাকা দিয়ে কি বাড়ি সারানো যায়?”

ক্ষতিপূরণের টাকা মেলেনি বলে জানান স্থানীয় বাগডাঙা গ্রামের হাসিবুল খাঁ, কুসুমতলার শক্তি গুড়িয়া, রফিক খাঁ, শেখ নজরুল, রামকৃষ্ণ জানারা। ফলে ঘর সারাতে পারেননি কেউই। তাঁদের অনেকে আবার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগও তুলছেন। অভিযোগ, ৪, ৮ ও ১০ জুন আবেদন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেবল ৪ তারিখে যারা আবেদন করেছেন, তাঁদের বাড়িতে প্রশাসন তদন্ত করেছে। ৮ ও ১০ তারিখে আবেদনকারীদের বাড়িতে কোনও তদন্ত হয়নি। ফলে ওই দু’দিন যারা আবেদন করেছেন, তাঁরা কেউ ক্ষতিপূরণের টাকাও পাচ্ছেন না।”

মৌসুনি পঞ্চায়েতের প্রধান হাসনা বানু বিবি বলেন, “ক্ষতিপূরণের বিষয়েটি বিডিওর তরফে দেখা হচ্ছে। আমার কাছে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নাম পাঠিয়েছি। এখন যাঁরা আসছেন, তাঁদের বিডিও অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছি। বিডিও অফিস থেকে নামের তালিকার বিষয়ে কিছু জানায়নি।”

নামখানার বিডিও শান্তনু ঠাকুর সিংহ বলেন, “এখন ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া চলছে। নামের তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। আবেদনকারীর অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল থাকলে সেগুলি সংশোধন করা হচ্ছে। এখনও যারা আসছেন, তাঁদের পোর্টালে নাম ঠিকানা আছে কিনা তা দেখে নেওয়া হচ্ছে।”

তাঁর দাবি, “বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হয়নি, এই অভিযোগ ঠিক নয়। আবেদন অনুযায়ী ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা সকলের বাড়িতে তদন্তে গিয়েছে।”

Cyclone Yaas

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}