সুপ্রচীন একটি শিব মন্দিরকে ঘিরে গাইঘাটার জলেশ্বরে বসেছে চড়ক মেলা। রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন।
শুক্রবার চড়ক মেলায় ছিল হাত কুড়ি উপর থেকে বঁটির উপরে ঝাঁপ। ন’শো জন মহিলা-পুরুষ এ বার চড়কের সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। ভিড় সামাল দিতে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের হিসেবে বেলা বারোটা পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ মেলায় এসেছিলেন।
প্রাচীন ওই শিব মন্দিরের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
মন্দির ও পর্যটন উন্নয়ন কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেন বংশের রাজত্বকালে দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে শিব পুজোর প্রচলন শুরু হয় এখানে। তখন একটি বিগ্রহ পুজো হতো। দেওয়ালে ছিল কাদা-ইটের গাঁথনি। পরে গোবরডাঙার জমিদার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শিব মন্দিরের জন্য ৬০ বিঘে জমি দান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে তৈরি হয়েছে অধুনা এই শিব মন্দির।
প্রাচীন মূল বিগ্রহটি অবশ্য এখন বছরের নির্দিষ্ট দিন ছাড়া দেখা যায় না। শিব মন্দিরের পাশে আছে চার একক ৪০ শতক জমির উপরে একটি পুকুর। যা ‘শিব পুকুর’ নামে পরিচিত। বছরভর পুকুরের নীচে রাখা থাকে বিগ্রহ। কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর চড়কে যাঁরা সন্ন্যাসী হন, তাঁরা চৈত্র মাসের তৃতীয় সোমবার শিব পুকুর থেকে বিগ্রহটি তুলে আনেন। পর দিন বিগ্রহ নিয়ে তাঁরা হেঁটে হালিশহরে গিয়ে বিগ্রহ গঙ্গায় স্নান করান। ফিরে স্থানীয় আটটি গ্রামের ভক্তদের বাড়িতে বিগ্রহ পূজা পান। পয়লা বৈশাখ বিগ্রহটি ফের শিব পুকুরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। কমিটির কার্যকরী সম্পাদক সহদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ বার নীল পুজোর দিন প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ পুকুরে স্নান করে দেবতার মাথায় জল ঢেলেছেন।’’
এখানকার চড়কের আরও একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সহদেহবাবু জানালেন, নীলপুজোর গভীর রাতে শ্মশান থেকে কাঠ এনে জ্যান্ত চ্যাং ও শোল মাছ পুড়িয়ে তা শিবের দুই চ্যালা নন্দী-ভৃঙ্গীকে খেতে দেওয়া হয়। এখানে মূল শিব মন্দির ছাড়াও আছে, শিবের প্রতীক্ষা মন্দির এবং কালী মন্দির। বছরে এখানে তিনটি মেলা বসে। তবে চড়ক মেলায় ভিড় হয় সব থেকে বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy