Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বোমা-গুলি চালিয়ে ব্যালট লুঠের অভিযোগ

হাড়োয়ার গোপালপুর ২ পঞ্চায়েতে ২৫৪ নম্বর বুথে শাসকদলের লোকজন ভিতরে থাকা এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয় বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, প্রায় ৮০ জন লোক বুথের মধ্যে ঢুকে ছাপ্পা দিতে থাকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

বিভিন্ন জায়গায় গুলি-বোমা চালিয়ে ব্যালট লুঠের অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। মারধরেরও অভিযোগ আছে বহু জায়গায়। তবে কিছু জায়গায় রুখে দাঁড়ান গ্রামবাসীরাও।

বসিরহাট ২ ব্লকের রাজেন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বর বুথে শুরু হয় বোমাবাজি। গুলিও চলে। সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোট শুরু হতেই গুলি-বোমা চালিয়ে লাইনের মানুষকে ছত্রভঙ্গ করে ছাপ্পা মারতে শুরু করে। প্রতিবাদ করলে আমাকে বন্দুকের বাট দিয়ে মারা হয়।’’ মারধর, ছাপ্পা ভোটের কথা মানতে চাননি শাসক দলের নেতারা।

হাড়োয়ার গোপালপুর ২ পঞ্চায়েতে ২৫৪ নম্বর বুথে শাসকদলের লোকজন ভিতরে থাকা এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয় বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, প্রায় ৮০ জন লোক বুথের মধ্যে ঢুকে ছাপ্পা দিতে থাকে। বিজেপির অক্ষয় বিশ্বাস ও কৌশিক বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করলে বুথ এজেন্ট-সহ আমাদের বেধড়ক মারধর করে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’ ঘণ্টাখানেক ধরে ছাপ্পা ভোট মারা হয় বলে অভিযোগ। ওই ব্লকেরই আটপুকুর ১১৫ ও ১১৭ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোট মারার অভিযোগে প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। এ ক্ষেত্রেও মারধর, ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।

স্বরূপনগর ব্লকের সীমান্তবর্তী কৈজুড়ি গ্রামে বিজেপি ছাপ্পা মেরেছে, এই অভিযোগে তৃণমূলের লোকজন ব্যালট বক্স নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। বাক্সে জল ঢেলে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।

এরই মধ্যে ওই ব্লকে দত্তপাড়ায় তৃণমূল ও সিপিএম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ১২ জন গুরুতর আহত হন। চারজনকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ৮ জনকে স্থানীয় শাঁড়াফুল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মারে গুরুতর জখম হন বালতি নিত্যানন্দকাটি পঞ্চায়েতে বয়ারঘাটা গ্রামের তৃণমূল নেতা আনার গাজি। তাঁকে শাঁড়াফুল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই অভিযোগ সিপিএম অস্বীকার করেছে।

হাড়োয়ার খাসবালান্দা এলাকায় দু’পক্ষের গণ্ডগোলের মধ্যে দুষ্কৃতীরা ব্যালট পেপার লুঠ করে বলে অভিযোগ। বসিরহাট ২ ব্লকে বেঁকির চাঁদনগর গ্রামে প্রায় ৩০ জনের একটি দল কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করে ছাপ্পা ভোট মারে বলে অভিযোগ।

সন্দেশখালিতে যে একটি দু’টি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছিল, তা-ও সকাল থেকে শাসকদলের হাতে চলে যায় বলে অভিযোগ। বিরোধীদের দাবি, সেখানেও শাসকদলের-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঢুকে ব্যালট তছনছ করেছে।

মিনাখাঁর চাপালি জয়কৃষ্ণপুরে প্রাথমিক স্কুলে সকাল থেকেই শাসকদলের দুষ্কৃতীরা ছাপ্পা ভোট মারে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বসিরহাটের গাছা রাজেন্দ্রপুর সর্বত্র ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শাসকদলের দুষ্কৃতীর ব্যালট বক্স নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। সে সব অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতারা।

ভোট তখন প্রায় শেষ। হাজারের মধ্যে সাড়ে নশো ব্যালটই জমা পড়ে গিয়েছে। সে সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র উচিঁয়ে ৮-১০ জন দুষ্কৃতী ঢোকে বসিরহাটের সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েতের এসএসকে স্কুলের ১৬ নম্বর বুথে। প্রিজাইডিং অফিসার রাখালচন্দ্র দাসের হাত থেকে বাকি ব্যালট ছিনিয়ে ছাপ্পা মেরে বাক্সে ফেলতে থাকে। একটা সময়ে তারা বুঝতে পারে, একশো শতাংশ ভোট হয়ে গিয়েছে। তিনটি ব্যালট বাক্সই তুলে নিয়ে ইছামতীর জলে ফেলে দেয় তারা। পরে পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে। পুলিশের অনুমান, একশো শতাংশ ভোট হলে নির্বাচন কমিশনের সন্দেহ বাড়তে পারে মনে করেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

হাসনাবাদে রূপমারি খেজুরবেড়িয়া ১৩৫ নম্বর বুথে শাসকদলের কয়েকজন দুষ্কৃতী ছাপ্পা ভোট মারতে এলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষ। তাঁরা ভোটকেন্দ্রের দরজায় তালা দিয়ে পুলিশকে খবর দেন। দুষ্কৃতীরা পাঁচিল টপকে পালায়। বাদুড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট মারার অভিযোগ বিরোধীদের। রামচন্দ্রপুর, শ্রীনগর, সায়েস্তানগর বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীরা গুলি-বোমা ছুড়ে লুঠপাট চালায় বলে অভিযোগ।

সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি অবশ্য বলেন, ‘‘বিরোধীদের জন্য ছোটখাটো দু’একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ভোট এমনিতে সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE