আবাস যোজনার বাড়ি। —প্রতীকী ছবি।
আবাস যোজনার ঘরের উপভোক্তাদের তালিকা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা ও হাতাহাতি হল উস্তির মগরাহাট এবং ভাঙড়ে। মঙ্গলবার বিকেলে মগরাহাট ১ ব্লকে অবস্থান বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দেওয়ার হয়েছে সিপিএমের তরফে। পরে আবার উস্তি মোড়ে প্রায় আধ ঘণ্টা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ চলে। অন্য দিকে, এ দিন ভাঙড় ২ ব্লকের চক মরিচা এলাকায় আবাস যোজনার ঘরে প্রাপকের তালিকা নিয়ে আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বেধে যায় প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনেই। জখম হন উভয় পক্ষের লোকজন। তৃণমূল প্রভাব খাটিয়ে তালিকায় স্বজনপোষণ করেছে বলে সিপিএম ও আইএসএফ অভিযোগ করেছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’টি ঘটনাই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মগরাহাট ১ ব্লকের দশটি পঞ্চায়েতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের আবাস যোজনার নাম নথিভুক্ত রয়েছে। সেই তালিকা যাচাইয়ের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই তালিকা ২০১৮ সালে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে করানো হয়েছিল। তারপরে ওই তালিকায় গরমিলের অভিযোগে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়। ফলে তা কার্যকর করা যায়নি। উপভোক্তা পিছু এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও বিরোধীদের অভিযোগ, ওই তালিকায় যাদের পাকা বাড়ি আছে এমন ব্যক্তির নাম রয়েছে। এমনকী, এক পরিবারের বাবা, ছেলে, বৌমা, তাঁর আত্মীয়-পরিজনের নাম তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছে! এ দিকে, প্রকৃত উপভোক্তারা মাটির ঘরে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ।
সিপিএমের দাবি, শাসক দল স্বজনপোষণ করেছে। ২০১৮ সালে আশাকর্মীদের দিয়ে যে সমস্ত নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল, সেখানে তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাকা বাড়ি ও গাড়ি আছে তাঁদের। হরিহরপুর পঞ্চায়েতের মহেশদাঁড়ি গ্রামের স্বদেশ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মাটির দেওয়াল টালি ও ত্রিপল ঢাকা ঘরটি আমপানের সময়ে পড়ে যায়। তারপর থেকে কোনও ভাবে ত্রিপল ঢাকা ছাউনির রান্নাঘরেই পরিবার নিয়ে আছি। জোরে বৃষ্টি হলে সকলে মাথায় ত্রিপল ঢাকা দিয়ে রাত জেগে বসে থাকতে হয়। আমাদের ঘর দরকার। কিন্তু পাচ্ছি না।’’
উস্তির মগরাহাট ১ ব্লকের সিপিএম নেতা, আন্দোলনকারী চন্দ্রনাথ সর্দারের অভিযোগ, ‘‘যাঁরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করতে যাচ্ছেন, তাঁরা তৃণমূলের নির্দেশ মতো কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে যে তৃণমূল নেতার বড় পাকা বাড়ি রয়েছে, তিনি একটি ত্রিপল ঘেরা কুঁড়ে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তালিকায় নাম তুলেছেন। তবে আন্দোলনের জেরে প্রশাসন প্রায় ২০০ জনের আবেদনপত্র নিয়েছে। বাকিদের আবেদনপত্র নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
বিরোধীদের অভিযোগ অস্বীকার করে মগরাহাট ১ ব্লক তৃণমূল যুবনেতা ইমরান হাসান বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনে গরিব মানুষের নাম তালিকায় রয়েছে।’’ মগরাহাট ১ বিডিও আশিক ইকবাল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৭০ শতাংশ সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। বাকি কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে। যে কেউ আবেদন করতে পারেন, আমরা খতিয়ে দেখব।’’
অন্য দিকে, মঙ্গলবার আবাস যোজনার ঘরে প্রাপকের তালিকা নিয়ে আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বেধে যায় প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনেই। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েক জন আহত হন। ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় ২ ব্লকের চকমরিচা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষের কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন আবাস যোজনার ঘর প্রাপকদের নামের তালিকা নিয়ে সমীক্ষায় যান ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তালিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান আইএসএফের পঞ্চায়েত সদস্য। অভিযোগ, তৃণমূল নেতারা নিজেদের লোক, যাঁদের পাকা বাড়ি আছে— এমন নাম তালিকায় দিয়েছে। প্রতিবাদ করলে তৃণমূলের হামলায় আইএসএফ কর্মী আবেদুল মোল্লা জখম হন বলে অভিযোগ। দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ উড়িয়ে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমির কর্মাধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওরা প্রথম থেকেই সমীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করছিল। আমাদের লোকজন প্রতিবাদ করতে গেলে মারমুখী হয়ে ওঠে।’’ ভাঙড় ২ বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমীক্ষা চলাকালীন একটা গন্ডগোল হয়েছে। পুলিশকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy