Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝাড়ফুঁকে প্রাণ গেল কিশোরীর

স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় রিমিকে। ভোর তখন ৪টে নাগাদ। ঘণ্টা দু’য়েক ধরে ওঝার কেরামতি চলে। কিন্তু ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে মেয়েটি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৪
Share: Save:

ওঝার কেরামতিতে প্রাণ গেল সর্পদষ্ট এক কিশোরীর।

সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর নাম রিমি মণ্ডল (১২)। মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তী থানার জয়গোপালপুর গ্রামে।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্যোতিষপুর হাইস্কুলের ছাত্রী রিমি সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়েছিল। রাত ৩টে নাগাদ পায়ে আচমকা ব্যথা হওয়ায় ঘুম থেকে উঠে বসে। দেখে, একটি কালাচ সাপ বিছানা থেকে নেমে যাচ্ছে। পাশে শুয়ে থাকা বোনকে ডেকে তোলে রিমি। বাড়ির লোকজন ছুটে আসেন। দেখা যায়, রিমির পায়ে সাপের দাঁতের দাগ।

স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় রিমিকে। ভোর তখন ৪টে নাগাদ। ঘণ্টা দু’য়েক ধরে ওঝার কেরামতি চলে। কিন্তু ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে মেয়েটি। অবশেষে রিমিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় ওই ওঝাই।

মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ বাসন্তী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় রিমিকে। শুরু হয় চিকিৎসা। বেশ কিছু এভিএস দেওয়ার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। মেয়েটিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় রিমির।

তার জেঠিমা মালতি মণ্ডল বলেন, “সাপের কামড় খেয়ে গ্রামের অনেকে ওই ওঝার কাছে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছে দেখেছি। আমি নিজেও সাপের কামড় খেয়ে ওঝার চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছিলাম। সে কারণেই রিমিকে নিয়ে ওঝার কাছে যাই। কিন্তু তাতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়। আমরা যদি হাসপাতালে নিয়ে আসতাম, তা হলে হয় তো মেয়েটা মারা যেত না।”

বারে বারে সচেতন করা সত্ত্বেও সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য ওঝা, গুনিনের উপরে ভরসা করছেন গ্রামের মানুষজন। যার পরিণতিতে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। সাপের কামড়ের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘ওঝার কাছে সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এলে আমরা চিকিৎসার সময় পেতাম। হয় তো ওকে বাঁচানো সম্ভব হত।”

এ বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। তার সদস্য দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘সাপের কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালেই হওয়া সম্ভব। এ কথা আমরা মানুষকে বুঝিয়ে আসছি অনেক দিন ধরে। তবুও এখনও মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। ওঝা-গুনিনের কাছেই যাচ্ছেন অনেকে। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।”

কিন্তু রিমির জ্যেঠিমা যে দাবি করছেন, সাপে কামড়ানোর পরে তিনি ওঝার কাছে চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে, তা কী করে সম্ভব?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হয় তো বিষধর সাপ ছোবল মারেনি। তাই কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওঝার কেরামতি কাজে আসে। তাতেই তাদের উপরে লোকের বিশ্বাস বেড়ে যায়। কিন্তু বিষধর সাপের ছোবল থেকে বাঁচার কোনও উপায় ওঝা-গুনিনের নেই। এ ব্যাপারে ওঝা-গুনিনদের নিয়েও কর্মশালার আয়োজন হয়েছে নানা সময়ে। তাদের বলা হয়, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার নামে তারা যেন সময় নষ্ট না করে। যেন দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সব ওঝা সে কথা শুনছে না। গ্রামের মানুষও সকলে সচেতন নন। ক’দিন আগেও হিঙ্গলগঞ্জের গ্রামে এক কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছিল সাপের ছোবলে। তাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওঝার কাছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Superstition Death Snake Bite Shaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy