Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Family in Distress

ঘর মেলেনি, অর্থাভাবে নেই পুজোর আনন্দও 

কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের মাঝে পড়ে সরকারি আবাস যোজনায় ঘরের টাকা পাচ্ছেন না গরিব মানুষ। যাঁরা এর আগে টাকা পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেককে কাটমানি দিতে হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় সে তথ্য নতুন করে উঠে আসায় শুরু হয়েছে শোরগোল। এ দিকে, ঘর না পেয়ে বিপর্যস্ত বহু পরিবার। পুজোর আলো পৌঁছয় না সে ঘরের কোণে। খোঁজ নিলেন আমাদের প্রতিবেদকেরা।  

Family PMAY

পাটকাঠির বেড়া ও ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে সবিতা। নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৯
Share: Save:

স্বপ্ন ছিল, এক দিন মাথার উপরে পাকা ছাদ হবে। বৃষ্টিতে অন্যের বাড়ি গিয়ে মাথা গুঁজতে হবে না। কিন্তু শিবপদ মাঝির আর সে সব দেখে যাওয়া হল না। কয়েক মাস আগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। এখনও তাঁর পরিবার সরকারি ঘরের টাকা পায়নি। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর পঞ্চায়েতের বায়লানি গ্রামে পাটকাঠি ঘেরা আর শতছিদ্র ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকেন শিবপদর স্ত্রী সবিতা ও ছেলে দিবাকর।

দেখা গেল, বাড়ি বলতে উইপোকায় নষ্ট করে দেওয়া জরাজীর্ণ পাটকাঠির বেড়া। তার উপরে ত্রিপলের কয়েকটি টুকরো দিয়ে ছাউনি দেওয়া একটা ঝুপড়ি। মাটির মেঝে আর বাড়ির উঠান সমান। ফলে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাড়ির মেঝে এখনও ভিজে আছে। বাড়ির চারিদিকে কচু গাছ। ওই ঝুপড়ির ত্রিপলের ছাউনিতে কুমড়ো গাছ। তা দেখিয়ে সবিতা জানালেন, মাত্র এক বিঘা চাষের জমি আছে তাঁদের। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে স্বামীর কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে জমি বন্ধক দিতে হয়েছে। আর কোনও জমি জায়গা নেই। তাই যে সামান্য জায়গায় এই ঝুপড়ি, তার আশপাশে কচু, কুমড়া গাছ লাগিয়েছেন। এই আনাজ রান্নার কাজে লাগে।

সবিতা জানান, বহু বছর ধরে তাঁরা মাটির বাড়িতে থেকেছেন। আয়লার পরে সে বাড়িও ভেঙে যায়। তারপর থেকে বাঁশ, পাটকাঠি সংগ্রহ করে ঝুপড়ি বানান। পাটকাঠির ঘর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতি বছর মেরামত করা সম্ভব হয় না দুঃস্থ পরিবারটির পক্ষে। এভাবে ঝুপড়ির ভিতরে থাকেন মা-ছেলে। ছেলে রাজীব কলেজ পড়ুয়া। মাঝে মধ্যেই গাড়ির খালাসির কাজ করেন। সবিতা দিনমজুরি করেন। সব মিলিয়ে মাসে উপার্জন ৩-৪ হাজার টাকা।

জানালেন, সামান্য আয়ে সংসারের টুকটাক কেনাকাটা করা হয়। এ ছাড়া, রেশনের চাল আর গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি সংগ্রহ করে কোনও রকমে খাওয়া চলছে। যা আয়, তাতে পাকা বাড়ি তো দূর, একটা মাটির বাড়ি তৈরি করার ক্ষমতা নেই। সবিতা বলেন, ‘‘শুনেছিলাম ঘরের তালিকায় নাম উঠেছে, ঘরের টাকা আসবে। সেই অপেক্ষায় থেকে থেকে স্বামী মারাই গেলেন। হয় তো আমিও এক দিন মারা যাব। কিন্তু পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হবে কী না জানি না!’’ বৃষ্টি এলে সবিতা পাশে শাশুড়ির ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরে গিয়ে থাকেন। অথবা দেওরের পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেন। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, "পরিবারটির ঘরের তালিকায় নাম আছে কি না খতিয়ে দেখব। যদি নাম থাকে, ঘরের টাকা এলে নিশ্চয়ই পাবেন। তালিকায় নাম না থাকলে কী করা যায় দেখা হবে।"

চার দিকে পুজোর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবিতারা ভেবেছিলেন, হয় তো টালবাহানা কাটিয়ে ঘরের টাকা দুর্গাপুজোর আগেই চলে আসবে। ঘর তৈরি হয়ে যাবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সবিতার কথায়, "এ বার আর দুর্গা পুজোর অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে যাব না। পুজো দিতে গেলেও কেনাকাটা করতে হয়। সেই টাকা নেই। আমাদের মনে আর পুজো নিয়ে আনন্দ নেই।" ছেলেকে পুজোয় নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি বলে আক্ষেপ ঝরে পড়ে মায়ের গলায়।

সবিতার প্রশ্ন, ‘‘মা দুর্গা কি আমাদের একটা পাকা বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy