বাড়িতে বসে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি হচ্ছে শামসুদ্দিন ঢালির পরিবারের। নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যাতে সাধারণ মানুষ পায়, সে কারণেই রাজ্য সরকার চালু করেছে দুয়ারে সরকার প্রকল্প। এ বার সেই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর হাতে রাতারাতি স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পৌঁছে দিল প্রশাসন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর ১ নম্বর ব্লকের ঘটনা। বুধবার রাতেই ক্যানসার আক্রান্ত শামসুদ্দিন ঢালি ও তাঁর স্ত্রীর হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পৌঁছে দেন স্থানীয় বিডিও এবং জেলা পরিষদের সদস্য। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড হাতে পেয়েই বর্ষশেষের দিন ভেলোর রওনা দিলেন আক্রান্ত যুবক ও তার পরিবার।
প্রশাসন সূত্রে খবর, স্থানীয় কুলেরদাড়ি অঞ্চলের দৌলতপুরের বাসিন্দা শামসুদ্দিন ঢালি দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। আগে একটি কারখানায় কাজ করতেন তিনি। যা আয় হত, তা দিয়েই কোনও মতে সংসার চালাতেন। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও পাঁচ বছরের এক ছেলেও রয়েছে তাঁর। বছর ছত্রিশের শামসুদ্দিনের জিভে প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে। এলাকার এক চিকিৎসককে দেখাতেন তিনি। কিন্তু জিভের ক্ষত ক্রমশ বাড়ছিল। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজের চিকিৎসার জন্য হাতে কোনও টাকাই থাকত না।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা পাশে দাঁড়ানোয় মাঝে মধ্যে চিকিৎসা করাতেন শামসুদ্দিন। এর মধ্যে লকডাউনের শুরুতে কাজটাও চলে যায়। স্থানীয় যে চিকিৎসক তাঁকে দেখতেন, তিনি ভাল চিকিৎসার জন্য ভেলোর নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চরম অর্থাভাবে সেটা করে উঠতে পারেননি শামসুদ্দিন। এর মধ্যেই বুধবার হঠাৎ করে জিভে অহসনীয় যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। কিন্তু ঘরে কোনও টাকা নেই, স্বামীকে নিয়ে কী ভাবে ভেলোর যাবেন তা ভাবতেই পারছিলেন না স্ত্রী ঋম্পা ঢালি।
বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ স্থানীয়দের মাধ্যমে সেই খবর জানতে পারেন বিষ্ণুপুর-১ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য বাবান গাজী। তৎক্ষণাৎ তিনি অসুস্থ শামসুদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই তাঁদের। তিনিই স্থানীয় বিডিও সুবীর দণ্ডপাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফোনে কথা বলে বিডিও জানতে পারেন, গত ১১ ডিসেম্বর দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন শামসুদ্দিনের স্ত্রী ঋম্পা। রাতের মধ্যে বিডিও স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে কার্ড তৈরির তোড়জোড় শুরু করেন।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ অসুস্থ শামসুদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন বিডিও। কয়েক মিনিটের মধ্যে শামসুদ্দিনের স্ত্রী ঋম্পার নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি হয়। সেই কার্ডই শামসুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেন বিডিও ও জেলা পরিষদের সদস্য। বৃহস্পতিবার রাতেই ট্রেনে ভেলোর রওনা দিলেন শামসুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বিডিও বলেন, ‘‘রোগীর অবস্থা দেখেই দ্রুত তাঁকে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করিয়ে দেওয়া হন। আশাকরি চিকিৎসার খরচ নিয়ে আর ভাবতে হবে না।’’
বাবানের কথায়, ‘‘দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমেই রাতারাতি ক্যানসার আক্রান্তের হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তকে কার্ডের বন্দোবস্ত করতে পেরে আমরা ভীষণ খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy